গোটা বিশ্বে প্রতিনিয়ত কত অদ্ভুত ঘটনা ঘটে চলেছে। সমাজ মাধ্যমের যুগে সেই সব অনেক কাণ্ডই সামনে আসে। যা নেটাগরিকদের মধ্যে চর্চাও কম হয় না। সম্প্রতি তেমনই একটি ঘটনা নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। এক মহিলা তাঁর দত্তক দেওয়া বায়োলজিক্যাল ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এমনকী তাঁদের সন্তানও হয়। সম্পর্কের এই কঠিন সত্য জানার পরও ?যেন আকাশ ভেঙে পড়ে মহিলার মাথায়। 

জন্মের পরই ছেলেকে দত্তক দিয়েছিলেন মহিলা। পরবর্তীকালে অজান্তে নিজের সন্তানের সঙ্গেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। একটি ভিডিওতে ওই মহিলা জানিয়েছেন, "২০১৫ সালে আমি যখন তাঁর সঙ্গে দেখা করি তাঁর বয়স ছিল ২১ বছর এবং এক বছর পর ২০১৬ সালে আমাদের প্রথম সন্তান হয়। ২০১৭ সালে আরেকটি সন্তান হয়। এরপরেই আমি জানতে পারি যে সে আসলে আমার ছেলে।" ঘটনাটিতে নেটদুনিয়া ছড়িয়ে পড়তেই হতবাক হয়ে যান সকলে। একইসঙ্গে এমন পরিস্থিতি কীভাবে হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেটাগরিকরা।

আরও পড়ুনঃ মাত্র ৩৮ বছর বয়সে মহিলার ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে, সেখানেই বৃদ্ধেরা যা করলেন, জানলে চোখে জল আসবে

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরণের ঘটনা ‘জেনিটিক সেক্সুয়াল অ্যাট্রাকশন' বা সংক্ষেপে জিএসএ নামে পরিচিত এক মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার কারণে হয়। সাধারণত মা-ছেলে, ভাই-বোন বা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়র সঙ্গে ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হলে তাদের মধ্যে যৌন আকর্ষণ তৈরি হয় না। একে বলা হয় ওয়েস্টারমার্ক প্রভাব। কিন্তু শৈশবে কেউ আলাদা হয়ে গেলে এমনটা হয় না। সেক্ষেত্রে পরবর্তীকালে দেখা হলে অচেনা ব্যক্তিত মতো শারীরিক ও মানসিক আকর্ষণ তৈরি হতে পারে। 

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, এটি মানসিক ঘটনা নয়, বরং 'ইন্সেস্ট' বা রক্তের সম্পর্কের মানুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ক। যা বেশিরভাগ দেশে আইনত অপরাধ। কারণ ঘনিষ্ঠ রক্তের সম্পর্কের মধ্যে সন্তান জন্মালে জন্মগত ত্রুটি, জিনগত রোগ এবং শারীরিক জটিলতার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। 

জিনের উপর ইন্সেস্ট কীভাবে প্রভাব ফেলে? মানুষের ডিএনএ ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমে সংগঠিত, প্রতিটিতে হাজার হাজার জিন থাকে। প্রতিটি জিন দুটি কপিতে আসে যাকে অ্যালিল বলা হয়। যা চোখের রং এবং রক্তের গ্রুপের মতো বৈশিষ্ট্যগুলিকে প্রভাবিত করে। কিছু জিন প্রভাবশালী অর্থাৎ কেবল একটি কপিই সেই বৈশিষ্ট্য দেখায়, আবার অন্যগুলো অপ্রত্যাশিত, যার জন্য দুটি কপি প্রদর্শিত হতে হয়। যেমন বাদামি চোখের রং প্রাধান্য পায়, তাই বাদামি চোখ থাকার জন্য একটি বাদামি জিন থাকা যথেষ্ট। নীল চোখ খুব একটা দেখা যায় না, তাই নীল চোখ থাকার জন্য একজন ব্যক্তির নীল জিনের দুটি কপি প্রয়োজন। একইসঙ্গে এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কিছু জেনেটিক রোগ যেমন সিস্টিক ফাইব্রোসিস, অপ্রত্যাশিত জিনের কারণে হয়।

সাধারণত যদি বাবামায়ের মধ্যে কেবল একজনের 'রিসেসিভ' জিন থাকে, তাহলে শিশু রোগ উত্তরাধিকারসূত্রে পাবে না। কিন্তু যখন নিকটাত্মীয়দের সন্তান থাকে, তখন বাবা-মা উভয়ের একই রিসেসিভ জিন বহন করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যা জিনগত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

মনস্তত্ত্বিবিদদের মতে, জিএসএ একটি বিরল ঘটনা হলেও এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। বহু দেশেই দু'জন প্রাপ্ত বয়স্ক পারস্পরিক সম্মনিতেও ইন্সেস্ট সম্পর্কের জন্য শাস্তি নির্ধারিত থাকে।