গরমে কিংবা শরীরচর্চার সময়ে ঘাম হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু খেয়াল করে দেখবেন, সকলে একরকম ঘামেন না। কারওর সামান্য পরিশ্রমেই অতিরিক্ত ঘাম নয়। ফলে তাঁরা অল্পেতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন, এমনকী সকলের সামনে অস্বস্তিওবোধ হয়। ঘামের সমস্যার সমাধানে নানা উপায় অবলম্বন করলেও অনেক সময়ে সুরাহা মেলে না। তবে অতিরিক্ত ঘামকে হালকাভাবে নিলে চলবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনও কারণ ছাড়া অতিরিক্ত ঘাম হওয়া শরীরে একটি প্রয়োজনীয় ভিটামিনের ঘাটতির ইঙ্গিত বহন করতে পারে। 

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ)- এর একটি প্রতিবেদনে নুযায়ী, শরীরে ভিটামিন বি১২-এর অভাবে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। এই বিশেষ ভিটামিনের ঘাটতির কারণে, বিশেষ করে রাতেদিকে ঘাম হতে দেখা যায়। আসলে 
ভিটামিন বি১২-এর অভাবের কারণে স্নায়ুতন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। যেহেতু স্নায়ুতন্ত্র আমাদের হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ এবং ঘাম গ্রন্থির মতো শরীরের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, তাই যদি এটি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের অবনতি হতে পারে, যার ফলে অতিরিক্ত ঘাম হয়। চিকিৎসকদের মতে, ভিটামিন বি১(থায়ামিন), বি৬ এবং বি১২ স্নায়ুতন্ত্র ও দেহের শক্তি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদের ঘাটতি হলে স্নায়ুর ওপর প্রভাব পড়ে এবং হাতের তালু বা পায়ের পাতায় অস্বাভাবিক ঘাম হতে পারে। শুধু তাই নয়, বি ভিটামিনের অভাবে হাত-পা ঝিনঝিন করা, দুর্বলতা বা মনোযোগে ঘাটতিও দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুনঃ পুজোর আগে ত্বকের জেল্লা উধাও? দামি ফেসিয়াল ছেড়ে নিয়মিত লাগান এই ঘরোয়া প্যাক, চটজলদি ফিরে পাবেন জৌলুস

এছাড়াও, ভিটামিন বি১২-এর অভাব শরীরে লোহিত রক্তকণিকা কমিয়ে দেয়, যা রক্তাল্পতার মতো অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। রক্তাল্পতা হলে শরীর অক্সিজেন সরবরাহের জন্য আরও বেশি পরিশ্রম করে এবং এই প্রক্রিয়ায় শরীর ঘামের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এমন পরিস্থিতিতে যদি হঠাৎ করে বেশি ঘাম শুরু হয়, বিশেষ করে রাতে ঘাম হয়, তাহলে অবশ্যই ভিটামিন বি১২ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। 

কাদের ভিটামিন বি১২-এর অভাব বেশি হয়

সাধারণত নিরামিষাশীদের মধ্যে ভিটামিন বি১২-এর অভাব বেশি দেখা যায়। কারণ এই ভিটামিন বেশিরভাগই আমিষ খাবারে পাওয়া যায়। এছাড়াও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন শোষণের ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ৫০ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে এই ভিটামিন কম থাকতে পারে। আবার হজমের সমস্যা  যেমন গ্যাস্ট্রিক বা অন্ত্রের রোগ হলেও শরীরে ভিটামিন বি১২ কম থাকতে পারে। যারা দীর্ঘদিন ধরে অ্যাসিড-বিরোধী বা শর্করা নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের শরীরে ভিটামিন বি১২ সঠিকভাবে তৈরি হয় না।

এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি ঘাটতি থাকলে মাথা বা কপালে অস্বাভাবিক ঘাম হতে পারে। ম্যাগনেশিয়ামের অভাবে ঘাম বাড়ে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ম্যাগনেশিয়াম অপরিহার্য। এই খনিজের ঘাটতি হলে শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে না, ফলে অতিরিক্ত ঘাম হতে শুরু করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব রোগীর দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত ঘাম সমস্যা রয়েছে, তাদের শরীরে ভিটামিন ডি ও ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম থাকে।