আজকাল ওয়েবডেস্ক: শিক্ষার যেমন কোনও বয়স হয় না তেমনই শরীরচর্চারও কোনও বয়স হয় না। তাই প্রৌঢ়ত্ব পেরিয়ে বার্ধক্যের দিকে যাচ্ছেন মানেই যে শরীরচর্চা ছেড়ে দিতে হবে এমন ধারণাও একেবারেই ঠিক নয়। এমনটাই জানাচ্ছে হার্ভার্ড হেলথ এর গবেষণা। একটি গবেষণাপত্রে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সাফ জানিয়েছেন, ৬০ বছরের উর্ধ্বে যাঁদের বয়স সেই সব প্রবীণ নাগরিকরা সপ্তাহে অন্তত দুদিন নিয়মিত শরীরচর্চা করতেই পারেন। বয়স যদি ৬০ স্পর্শ করে তবে দৈনিক অন্ততপক্ষে ১৫০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা নড়াচড়ার মধ্যে থাকতে হবে।
ভাবছেন ৬০ বছর বয়সে শরীরচর্চা শুরু করা আদৌ সম্ভব? সম্ভব। বিজ্ঞানসম্মতভাবে এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। এই বয়সে শরীরচর্চা শুরু করা কেবল নিরাপদই নয়, এটি সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণও বটে।
কীভাবে শুরু করবেন?
৬০ বছর বয়সে শরীরচর্চা শুরু করার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি কোনও স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে। তবে কিছু কিছু বিষয়ে সকলকেই মেনে চলতে হবে
আরও পড়ুন: পুরুষের ওই বিশেষ লোমে কুকুরের থেকেও বেশি জীবাণু থাকে! ঠিকভাবে পরিষ্কার করবেন কীভাবে? জেনে নিন ৬ টিপস
১. তাড়াহুড়ো নয় ধীরে ধীরে শুরু করতে হবে। শরীরের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী ব্যায়ামের তীব্রতা ও সময়কাল বাড়াতে হবে। প্রথমে একদম সাধারন হাঁটাচলা দিয়েই শুরু করতে পারেন। কয়েক সপ্তাহ পর শরীর মানিয়ে নিতে শুরু করলে আরেকটু কঠিন কিছু চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে যাঁদের দীর্ঘস্থায়ী কোন শারীরিক সমস্যা রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ব্যায়াম বাদ দিতে হতে পারে। এই বিষয়টি চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করে নিন।
২. ওয়ার্ম-আপ এবং কুল-ডাউন ব্যায়ামের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আঘাতের ঝুঁকি কমায়। তাই সকালে উঠেই তাড়াহুড়ো করে ব্যায়াম করতে যেতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। পৃথিবীর সুস্থ তৈরি হন যে কোন ব্যায়াম করার আগে শরীরকে একটু জ্বালিয়ে নিতে হালকা নড়াচড়া করুন তারপর ব্যায়াম শুরু করুন। আবার ব্যায়াম শেষের পর শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন।
আরও পড়ুন: পুরুষের ওই বিশেষ লোমে কুকুরের থেকেও বেশি জীবাণু থাকে! ঠিকভাবে পরিষ্কার করবেন কীভাবে? জেনে নিন ৬ টিপস
৩. সঠিক ধরণের ব্যায়াম নির্বাচন করা জরুরি, যা ব্যক্তির শারীরিক সক্ষমতা এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে। হাঁটা, সাঁতার, যোগা, তাই চি এবং হালকা ওজন নিয়ে শরীরচর্চা করা এই বয়সের জন্য ভাল বিকল্প হতে পারে। বিশেষ করে যারা অস্থি সন্ধির ব্যথায় ভুগছেন তাদের জন্য জলের ভেতর শরীর চর্চা করা অনেক বেশি নিরাপদ। এতে জয়েন্টের উপর কম চাপ পড়ে। আবার দেখি ভারসাম্য বিদ্যে গিয়ে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না।
৬০ বছর বয়সে শরীরচর্চা শুরু করার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা রয়েছে
হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তনালীগুলির শক্ত ও সরু হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। একে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বলে। নিয়মিত শরীরচর্চা, বিশেষ করে হাঁটা, সাঁতারের মতো অভ্যাস রক্তনালীগুলির স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে এবং রক্তচাপ কমায়। এটি খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে।
পেশী শক্তি ও হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি: বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পেশীভর এবং হাড়ের ঘনত্ব কমতে শুরু করে, যা দুর্বলতা, ভারসাম্যহীনতা এবং হাড় ভাঙার ঝুঁকি বাড়ায়। হাঁটা, হালকা ওজন তোলা এবং রেসিসটেন্স ট্রেনিং পেশী প্রোটিন সংশ্লেষণকে উৎসাহিত করে এবং হাড়ে খনিজের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। এর ফলে শারীরিক শক্তি বাড়ে এবং পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে।
আরও পড়ুন: পুরুষের ওই বিশেষ লোমে কুকুরের থেকেও বেশি জীবাণু থাকে! ঠিকভাবে পরিষ্কার করবেন কীভাবে? জেনে নিন ৬ টিপস
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য: বয়সকালে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। শরীরচর্চা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম গ্লুকোজকে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: শরীরচর্চা মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং এন্ডোরফিন নামক হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে, যা মনকে প্রফুল্ল রাখে এবং মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমাতে সাহায্য করে। এটি স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতেও সহায়তা করে।
