আজকের দ্রুতগতির জীবনে সবচেয়ে উপেক্ষিত জিনিসটি হল ‘ঘুম’। কাজের চাপ, মানসিক ক্লান্তি আর স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার-সব মিলিয়ে মানুষ যেন ক্রমশ ঘুমহীন হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ঘুমের নানা ট্রেন্ড। যা আসলে গভীর বার্তা বহন করে যে বর্তমানে সকলেই প্রচণ্ড ক্লান্ত, এবং মানসিকভাবে বিশ্রামের অভাবে ভুগছে আট থেকে আশি। 
 
সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ঘুম নিয়ে একের পর এক নতুন ট্রেন্ড জনপ্রিয় হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘পটেটো বেড’, যেখানে বিছানাকে কুশনের মতো নরম ও আরামদায়কভাবে সাজিয়ে রাখা হয়, যেন শরীর নিরাপদবোধ করে। আবার ‘ডার্ক শাওয়ারিং’ ট্রেন্ডে ঘুমানোর আগে অন্ধকার বা মৃদু আলোয় স্নান করা হয়, যাতে শরীর শিথিল হয়। ‘মাউথ টেপিং’ পদ্ধতিতে মুখ বন্ধ রেখে নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা হয়, যা ঘুমের গুণমান বাড়ায় বলে দাবি করা হচ্ছে।
 
এছাড়াও আছে ‘মিলিটারি স্লিপ টেকনিক’ যা সেনাদের প্রশিক্ষণ থেকে নেওয়া। ধীরে ধীরে শরীরের প্রতিটি পেশি শিথিল করে মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিতে সাহায্য করে। আর ‘স্লিপি গার্ল মকটেল’ হল চেরি জুস, ম্যাগনেসিয়াম পাউডার ও স্পার্কলিং ওয়াটারে তৈরি এক পানীয় যা ঘুম আনতে নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
 
কিন্তু এই সব ট্রেন্ডের পেছনে রয়েছে এক অস্বস্তিকর বাস্তবতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমের অভাব এখন সারা বিশ্বের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।তথ্য বলছে, ভারতে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ অনিদ্রা বা ঘুমজনিত সমস্যায় ভুগছেন এবং প্রায় ৬১ শতাংশ মানুষ দিনে ছয় ঘণ্টার কম ঘুমাচ্ছেম। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম, মানসিক উদ্বেগ, অস্বাস্থ্যকর খাবার আর অনিয়মিত রুটিন-সব মিলিয়ে শরীর ও মন দুটোই বিশ্রাম হারাচ্ছে।ফলে দিনভর ক্লান্তি, মনোযোগের ঘাটতি, খিটখিটে মেজাজ, এমনকি ডিপ্রেশনের ঝুঁকি। 
 
চিকিৎসকদের মতে, ঘুমের অভাব শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, ওজন বাড়ায় এবং ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের আশঙ্কাও বাড়ায়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমের জন্য ‘হ্যাক’ নয়, দরকার নিয়মিত জীবনযাপন ও মানসিক বিশ্রাম। ঘুমকে বিলাসিতা না ভেবে বরং সুস্থতার প্রয়োজনীয় অভ্যাস হিসেবে দেখতে হবে।