রাত যতই বাড়ুক একদৃষ্টে ঘুরন্ত পাখার দিকেই রয়েছে আপনার চোখ। শত চেষ্টা করেও ঘুমের কোনও পাত্তা নেই। বেশ অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করে শেষমেশ সেই মোবাইলের নীল আলোয় খানিক খুটখুট করার অভ্যাস। ব্যস, ঘুমের আরও বারোটা বেজে গেল! কী নিজের সঙ্গে মিল পাচ্ছেন তো? তবে শুধু আপনি নন, আজকাল ঘুম না হওয়ার সমস্যায় ভুক্তভোগী অনেকেই। শরীরে এক রাশ ক্লান্তি থাকলেও বিছানায় শুলেই ঘুম যে আর আসে না। ঠিক কেন দিনকেদিন বাড়ছে অনিদ্রার সমস্যা? কীভাবে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন? জেনে নিন-

বর্তমানে পেশাগত থেকে ব্যক্তিগত, মানুষের জীবনে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা অনিদ্রার কারণ। অত্যাধিক মোবাইল, কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকলেও ঘুম আসতে চায় না। বৈদ্যুতিন গ্যাজেটের বেশি ব্যবহার বিশেষ করে রাতে শুয়ে মোবাইলের ব্যবহার, কানে হেডফোন গুঁজে গান শোনা,  রাত জেগে ল্যাপটপে কাজ, টিভি দেখার অভ্যাস ঘুমের দফারফা করে দেয়। শারীরিক অস্বস্তি অর্থাৎ শরীরের কোনও অসুখবিসুখও ঘুম না আসার কারণ। মানসিক কোনও সমস্যা থাকলেও ঘুম কম হয়। অ্যালঝাইমার্স, পার্কিনসন্স রোগ থাকলে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়। ঘুম আসছে না, এই নিয়ে বেশি চিন্তাও ঘুম আরও কমিয়ে দেয়।

 

আরও পড়ুনঃ পায়ের এই সব লক্ষণ গোপন রোগের পূর্বাভাস হতে পারে! অবহেলা করলেই বিপদে পড়বেন

 

ভাল ঘুমের জন্য যে সব নিয়ম মেনে চলবেন- 

১. বালিশের কভার নিয়মিত পরিবর্তনঃ গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে অন্তত একবার বালিশের কভার পরিবর্তন করলে ধুলো, ঘাম, ত্বকের মৃত কোষ ও জীবাণুর পরিমাণ কমে যায়। এতে অ্যালার্জি ও সর্দি-কাশির ঝুঁকি কম থাকে এবং ঘুমের পরিবেশ ঠিক থাকে। পরিষ্কার বিছানার চাদর ও বালিশের কভার মস্তিষ্ককে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।

২. বিকেলের পর ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুনঃ চা, কফি, কোল্ডড্রিঙ্কস বা এনার্জি ড্রিঙ্কে থাকা ক্যাফেইন শরীরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সক্রিয় থাকে। বিকেলের পর এসব পান করলে রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, দুপুর ৩টের পর ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। এতে ঘুমের সময় শরীর সম্পূর্ণ শিথিল হতে পারে।

৩. ঘুমের আগে ভারী খাবার নয়ঃ রাতের খাবার যতটা সম্ভব হালকা হওয়া উচিত। অতিরিক্ত তেল-ঝাল বা ভারী খাবার হজমে সময় নেয় এবং পাকস্থলীতে অস্বস্তি তৈরি করে, যা গভীর ঘুমে বাধা দেয়। তাই শোওয়ার অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন। যদি পরে খিদে পায় তাহলে কলা বা বাদামের মতো হালকা খাবার খাওয়া ভাল।

৪. স্ক্রিন টাইম কমানঃ মোবাইল, টিভি বা ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো (ব্লু লাইট) মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। এই হরমোনই ঘুমের জন্য অপরিহার্য। তাই ঘুমের অন্তত এক ঘণ্টা আগে সব ধরনের স্ক্রিন বন্ধ করে বই পড়া, ধ্যান বা হালকা গান শোনার মতো বিকল্প অভ্যাস গড়ে তোলাই শ্রেয়।

৫. নিয়মিত ঘুমের রুটিনঃ প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও জাগার অভ্যাস শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লক বা সার্কাডিয়ান রিদমকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। ঘুমের আগে একটি নির্দিষ্ট শান্ত রুটিন যেমন গরম জলে স্নান, ডায়েরি লেখা বা হালকা সঙ্গীত মস্তিষ্ককে সংকেত দেয় যে ‘এখন বিশ্রামের সময়’।

৬. আলো বন্ধ রাখুন: শোওয়ার ঘরে লাইট বন্ধ রাখুন। ঘুমের সময়ে চারপাশে যাতে কোনও আওয়াজ না থাকে এই বিষয়টিও খেয়াল রাখুন। শোয়ার গদি খুব নরম বা খুব শক্ত হওয়া চলবে না।