যে কোনও অসুখই প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যার জন্য রোগের নির্দিষ্ট লক্ষণ বোঝা জরুরি। শরীরে রোগ বাসা বাঁধলে তার লক্ষণ বিভিন্ন অঙ্গে ফুটে ওঠে। যেমন পায়েও একাধিক শারীরিক সমস্যার উপসর্গ দেখা যায়। যা সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা অত্যন্ত জরুরি।
* পায়ের পাতা ও গোড়ালি ফোলাঃ পায়ের পাতা এবং গোড়ালিতে ফোলাভাব যাকে সাধারণত ফ্লুইড রিটেনশন' বলা হয়, এটি হৃদরোগ, কিডনি বা লিভারের রোগ সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। প্রোটিন বা ভিটামিন বি১২ এবং ফোলেটের অভাবের কারণেও হতে পারে। ফোলাভাব কমাতে আপনার পা কিছুক্ষণ উঁচু করে রাখুন। খাবারে নুনের পরিমাণ কমিয়ে দিলেও তা তরল ধরে রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ ভুল জানতেন চিকিৎসকেরা? মানসিক অবসাদের সঙ্গে আদৌ যোগ নেই মাথার হরমোনের!
* পা বা গোড়ালিতে ব্যথাঃ আঘাত লাগা, আর্থ্রাইটিস বা স্নায়ু-সম্পর্কিত সমস্যার কারণে পায়ের পাতায় বা গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে। যদি হাঁটার সময় ব্যথা বাড়ে এবং বিশ্রাম নেওয়ার সময় কমে যায়, তাহলে এটি স্ট্রেস ফ্র্যাকচার বা অস্টিওপোরোসিসের লক্ষণ হতে পারে। ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পেশীতে টান এবং জয়েন্টে ব্যথার কারণ হতে পারে। স্নায়ুর সমস্যা বা গোড়ালিতে অপর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহের কারণেও ব্যথা হতে পারে।
* অসাড়তা বা ঝিনঝিনঃ পায়ের অসাড়তা বা ঝিনঝিন করা স্নায়ুর ক্ষতি হওয়ার লক্ষণ যা পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি নামেও পরিচিত। এটি ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত অ্যালকোহল খাওয়া বা কেমোথেরাপির কারণেও হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে এই সমস্যাটি সাধারণ কারণ রক্তে উচ্চ শর্করার পরিমাণ স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে। এছাড়াও শরীরে ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন ই-এর মতো প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাবও স্নায়ুর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। যা এই সমস্যার কারণ হতে পারে।

* পায়ে খিঁচুনিঃ ঘন ঘন পায়ে ব্যথা জলশূন্যতা অথবা ম্যাগনেশিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং খনিজ পদার্থের অভাবের লক্ষণ হতে পারে। পেশি ও স্নায়ু সংক্রমণের সঠিক কার্যকারিতার জন্য এই খনিজ পদার্থগুলি অপরিহার্য। যদি আপনার ঘন ঘন পেটে ব্যথা হয়, তাহলে প্রচুর জল পান করুন, পুষ্টি এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার খান এবং ঘুমানোর আগে হালকা স্ট্রেচিং এবং পা ম্যাসাজ করুন।
* গোড়ালি ব্যথাঃ গোড়ালি ব্যথা বা প্লান্টার ফ্যাসাইটিস একটি সাধারণ সমস্যা। এটি অনেক কারণে হতে পারে কিন্তু যদি আপনার ক্রমাগত ব্যথা হয়, তাহলে এর পিছনে কিছু গুরুতর কারণ থাকতে পারে। ভিটামিন ডি-এর অভাব, ভুল জুতা পরা, অতিরিক্ত ওজন, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম গোড়ালি ব্যথার কারণ হতে পারে।
* ঠান্ডা পাঃ অনেকেরই ঠান্ডা পা-এর সমস্যা হয়। তবে এটি কোনও অভ্যন্তরীণ রোগের লক্ষণও হতে পারে। রক্ত সঞ্চালন দুর্বল হওয়া, পুষ্টির অভাব, থাইরয়েড সমস্যা, খারাপ জীবনযাত্রার মতো কারণে হাত ও পা ঠান্ডা হয়ে যায়। খাদ্যতালিকায় আয়রন এবং থাইরয়েডযুক্ত খাবার রাখার চেষ্টা করুন। পা গরম রাখার জন্য ইনসুলেটেড জুতা বা মোজা পরুন।
* গোড়ালির ত্বক ফাটাঃ গোড়ালি ফাটা কেবল শুষ্ক ত্বকের কারণেই হয় না, ভিটামিন এ, জিঙ্ক এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাবের কারণেও হতে পারে। ডায়াবেটিস এবং একজিমাও এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। খালি পায়ে হাঁটা, ভুল জুতা পরা এবং সাবান ব্যবহারও এই সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যা এড়াতে নিয়মিত গোড়ালিতে ময়েশ্চারাইজার মাখুন এবং সঠিক এবং আরামদায়ক জুতা পরুন।
* পায়ে মাকড়সার শিরাঃ রক্ত জমার কারণে পায়ের শিরাগুলো মাকড়সার জালের মতো দেখাতে শুরু করে। শিরায় উপস্থিত ভালভগুলি দুর্বল হয়ে গেলে, রক্ত সঠিকভাবে উপরের দিকে যেতে পারে না এবং জমা হয়। ফলে মাকড়সার শিরা তৈরি হয়। ভিটামিন সি এবং বায়োফ্ল্যাভোনয়েডের অভাবের কারণেও এই সমস্যা হতে পারে।
