সমাজ মাধ্যমে চোখ রাখলে কত রকম বিষয়ই না নজরে আসে। যার মধ্যে কিছু বিষয় ভাইরাল হতে সময় নেয় না। বর্তমানে তেমনই এক অদ্ভুত ট্রেন্ড নেটদুনিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। বারান্দা, জানালা অথবা বাড়ির গেটে প্লাস্টিক ব্যাগে জল ভরে তার সঙ্গে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের বল রেখে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। আর এতেই নাকি কমছে মশা, মাছি থেকে পোকামাকড়ের উৎপাত। এই হ্যাক নিয়ে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে হাজারও ভিডিও, ভরে গিয়েছে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম রিলস।
এই পদ্ধতির মূল যুক্তি প্রতিফলন। অআর্থাৎ স্বচ্ছ প্লাস্টিক ব্যাগে থাকা জলে আলো প্রবেশ করলে তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার সঙ্গে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ঝলমলে প্রতিফলন মিলে তৈরি হয় তীব্র চকচকে আলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, মশা-মাছির মতো পোকামাকড়ের চোখ আলোতে অত্যন্ত সংবেদনশীল। তারা এই রকম ঝলমলে, ভাঙাচোরা প্রতিফলনে বিভ্রান্ত হয় এবং সেই জায়গায় উড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। তাই অনেকেই বলছেন, এভাবে ব্যাগ ঝুলিয়ে রাখলে মশা-মাছির সংখ্যা সত্যিই কমে যায়।
শুধু পোকামাকড় নয়, কিছু এলাকায় মানুষ একই কৌশল ব্যবহার করছেন পায়রা বা কাক তাড়ানোর জন্যও। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের টুকরো বাতাসে নড়াচড়া করলে যে রকম তীব্র প্রতিফলন তৈরি হয়, তা অনেক পাখিকে ভয় দেখাতে পারে। ফলে বারান্দায় পাখি বসা বা নোংরা করার প্রবণতা কমে।
তবে প্রশ্ন হল, এটি কি সত্যিই বিজ্ঞানে প্রমাণিত? বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ট্রিক পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়। কিছু ক্ষেত্রে কাজ করলেও, সব জায়গায় বা সব ধরনের আলোতে একই ফল পাওয়া যায় না। প্রতিফলনের শক্তি নির্ভর করে ব্যাগের অবস্থান, সূর্যের আলো কোন দিকে পড়ছে, ব্যাগের আকার এবং ফয়েলের পরিমাণের উপর। তাই দিনের একটি সময়ে কাজ করলেও অন্য সময়ে কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
এর পাশাপাশি, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল সম্পর্কেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কিছু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। বেশি তাপ বা খাবারের সঙ্গে নিয়মিত সংস্পর্শে এলে ফয়েল থেকে ক্ষতিকর উপাদান নিঃসৃত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যদিও এই হ্যাকের তেমন ঝুঁকি নেই, তবে দীর্ঘসময় বাইরে রেখে দিলে ফয়েল নোংরা হয়ে যেতে পারে, যা থেকে বাড়তি সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতাও মিশ্র। অনেকে বলছেন, এই কৌশল সত্যিই ফল দিয়েছে। ঘরে মাছির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। আবার কেউ কেউ জানিয়েছেন, কয়েকদিন পরেই প্রভাব কমে গেছে এবং পোকামাকড় আগের মতোই ফিরে এসেছে।
সবমিলিয়ে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি সস্তা, সহজ, রাসায়নিকমুক্ত ‘সহায়ক’ পদ্ধতি, কিন্তু একমাত্র সমাধান নয়। মশা-মাছির সমস্যা হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং প্রমাণিত কীটনাশক ব্যবহারের সঙ্গে এই ট্রিক মিলিয়ে ব্যবহার করা যেতেই পারে।
