আজকাল প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রায় সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। প্লাস্টিকের বাটি, বোতল, টিফিন বক্স, ফুড কন্টেইনার এবং ডিসপোজেবল প্লেটের ব্যবহার এখন প্রতিটি বাড়ি, অফিস, এমনকি স্কুলেরও অংশ হয়ে গিয়েছে। এগুলি হালকা, সস্তা এবং সহজলভ্য হওয়ায় ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু কখনও কি ভেবেছেন, এই প্লাস্টিকের বাটিতে খাবার খাওয়া কতটা স্বাস্থ্যকর?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ প্লাস্টিকের বাটিতে বিসফেনল-এ (BPA) বা ফথেলেটস-এর মতো রাসায়নিক থাকে। যখন এই বাটিতে গরম খাবার রাখা হয় বা মাইক্রোওয়েভে গরম করা হয়, তখন এই রাসায়নিকগুলি খাবারের সঙ্গে মিশে যায়। এগুলো শরীরে পৌঁছে হরমোন সিস্টেমকে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে এন্ডোক্রাইন সিস্টেমে ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, প্রজনন ক্ষমতা কমে যায় এবং কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। বেশিরভাগ গবেষণায় যদিও সরাসরি প্লাস্টিককে ক্যানসারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি।
গরম খাবার যখন প্লাস্টিকের কন্টেইনারে রাখা হয় বা গরম করা হয়, তখন প্লাস্টিকের স্তরগুলি গলে যেতে পারে এবং রাসায়নিক লিক হয়। এই প্রক্রিয়াটিকে লিচিং বলা হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গরম খাবার বা পানীয় প্লাস্টিক থেকে বেশি রাসায়নিক শোষণ করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ছোট শিশুদের শরীর বিকাশমান অবস্থায় থাকে, তাই তাদের হরমোন সিস্টেমের উপর বাইরের প্রভাব বেশি ক্ষতি করতে পারে। শিশুদের জন্য অবশ্যই বিপিএ-ফ্রি পণ্য ব্যবহার করা উচিত।
আমরা প্রায়ই পার্টি বা ভ্রমণের সময় সিঙ্গেল-ইউজ ডিসপোজেবল প্লেট এবং কাপ ব্যবহার করি। এই প্লাস্টিকের বাটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকরই নয়, এগুলো খারাপ মানের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হওয়ায় আরও বেশি টক্সিক রাসায়নিক থাকতে পারে। বারবার ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, স্টিল, কাচ বা মাটি দিয়ে তৈরি বাটির তুলনায় প্লাস্টিক কম নিরাপদ। তাই দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের জন্য নন-প্লাস্টিক বিকল্প বেছে নেওয়া উচিত। স্বাস্থ্য সচেতনরা সাধারণত স্টেইনলেস স্টিল, কাচ, বাঁশ বা মাটির বাটি ব্যবহার করতে পারেন।
প্লাস্টিকের ব্যবহার সুবিধাজনক হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি হরমোন এবং স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই যতটা সম্ভব নিরাপদ, প্লাস্টিক ছাড়া অন্য কোনও উপাদানের বাটি ব্যবহার করা উচিত।
প্লাস্টিকের বাটি ব্যবহার সহজ এবং সস্তা হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। গরম খাবারের সঙ্গে প্লাস্টিকের রাসায়নিকের সংস্পর্শ হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে। বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই আমাদের উচিত দীর্ঘমেয়াদে নন-প্লাস্টিক বিকল্প, যেমন স্টেইনলেস স্টিল, কাচ, বাঁশ বা মাটির বাটি ব্যবহার করা। ছোট ছোট সচেতন পদক্ষেপই আমাদের ও পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
