অনেকেই মনে করেন, শরীরে কোনও ভিটামিন বা খনিজের অভাব দেখা দিলে হাড় দুর্বল হওয়া বা চুল পড়ার মতো লক্ষণ ফুটে ওঠে। কিন্তু এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। দিল্লির এইমস-এর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ড. সৌরভ শেঠি জানিয়েছেন, শরীর অনেক আগে থেকেই কিছু মৃদু সঙ্কেত দিতে শুরু করে, যা বেশিরভাগ মানুষ উপেক্ষা করেন। এই প্রাথমিক লক্ষণগুলি চিনে নিতে পারলে গুরুতর সমস্যা এড়ানো সম্ভব। তেমনই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের অভাবের প্রাথমিক ইঙ্গিতের বিষয়ে জেনে নিন-

১. ভিটামিন ডিঃ বেশিরভাগ মানুষের ধারণা, ভিটামিন ডি-এর অভাবের প্রথম লক্ষণ হল দুর্বল হাড়। আদতে এই ভিটামিনের ঘাটতির প্রথম সতর্কতা হতে পারে কোনও সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই মন খারাপ থাকা বা হতাশা অনুভব করা। ড. শেঠির মতে, ভিটামিন ডি সরাসরি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত।

২. ম্যাগনেসিয়াম পেশিতে টান বা খিঁচুনি হল ম্যাগনেসিয়াম ঘাটতির প্রথম লক্ষণ, এমন ধারণা প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রথম সতর্কতা হল রাতে ভাল ঘুম না হওয়া এবং কারণ ছাড়া অতিরিক্ত উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা। ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে, এর অভাবে ঘুমের চক্র ব্যাহত হয়।

৩. ক্যালসিয়ামঃ অনেকে ভাবেন, ক্যালসিয়ামের অভাবের প্রথম সঙ্কেত হল হাড় দুর্বল হওয়া বা ব্যথা। কিন্তু এই খনিজের প্রথম সতর্কতা হাত-পায়ের আঙুল বা ঠোঁটে ঝিনঝিন করা বা অসাড়তা অনুভব করা। ক্যালসিয়াম স্নায়ু সংকেত পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এটির অভাব হলে স্নায়ুগুলি অতি-সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।

৪. জিঙ্কঃ জিঙ্কের অভাবের প্রথম লক্ষণ হল ক্ষুধা কমে যাওয়া বা দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা, এমনটা বিশ্বাস করেন অনেকে। কিন্তু স্বাদ বা গন্ধের অনুভূতি কমে যাওয়া জিঙ্কের ঘাটতির প্রথম ইঙ্গিত হতে পারে। আসলে জিঙ্কের অভাবের সঙ্গে স্বাদ কোরক এবং ঘ্রাণতন্ত্রের কার্যকারিতা সরাসরি জড়িত।

৫. আয়রনঃ আয়রনের অভাবের প্রথম লক্ষণ হল চুল পড়া বা চোখের নিচে কালো দাগ, এমনটা মনে করেন অনেকে। এদিকে রাতে ভাল ঘুম হওয়া সত্ত্বেও অবিরাম ক্লান্তি অনুভব করা আয়কনের ঘাটতির প্রথম সংকেত হতে পারে। আয়রন শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন বহন করতে সাহায্য করে, তাই এর ঘাটতিতে ক্লান্তি সবচেয়ে আগে আসে।

দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য জটিলতা এড়াতে এই প্রাথমিক লক্ষণগুলিকে শুধুমাত্র মানসিক চাপ বা খারাপ জীবনযাত্রার ফল মনে করে এড়িয়ে চলা উচিত নয়। বরং অবিলম্বে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।