আজকাল ওয়েবডেস্ক: জন্ম হয়েছিল ধনী পরিবারে, কিন্তু জীবন কাটল এক কামরার খুপরি ঘরে। বিনোদন বলতে ছিল শুধু একটি রেডিও। অন্যদিকে, যাঁর হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম, তিনি বড় হলেন রাজার হালে। নিয়তির এমনই পরিহাসের শিকার হলেন জাপানের ৬০ বছর বয়সি এক ব্যক্তি। জন্মের সময় হাসপাতালেই অদলবদল হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা! ছয় দশক পর সেই সত্যি সামনে আসায় তোলপাড় গোটা দেশ।
 
 
 আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনায় মরেননি, জেতেন ৫ কোটির লটারি! সাতবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরা বিশ্বের সবচেয়ে ‘লাকি’ ব্যক্তি ইনি
 
 
 স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর ৬০ বছর বয়সি ওই ব্যক্তির ট্রাক চালিয়ে জীবন কেটেছে। অথচ তিনিই আসলে এক ধনী ব্যবসায়ীর সন্তান। চার ছেলের মধ্যে সবচেয়ে বড় হওয়ার কথা ছিল তাঁরই। কিন্তু হাসপাতালের মারাত্মক ভুলে এক দরিদ্র বিধবা মহিলার কাছে বড় হন তিনি। ওই মহিলা তখন স্বামীর মৃত্যুর পর নিজের সন্তানদের সঙ্গে কোনওক্রমে বড় করেন তাঁকে। ছোট থেকেই তাঁকে রাতের স্কুলে পড়তে হয়েছে। হাড়ভাঙা খাটুনি করতে হয়েছে কারখানায়। দারিদ্র্যের কারণে তিনি বিয়েও করেননি।
 
 
 আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
 
 
 বিষয়টি নিয়ে প্রথম সন্দেহ জাগে ওই ধনী পরিবারের তিন ছোট ভাই-এর মনে। তাঁরা লক্ষ্য করেন, তাঁদের বড় দাদার সঙ্গে পরিবারের কারও চেহারার কোনও মিল নেই। বিষয়টি নিয়ে মাকে প্রশ্ন করলে তাঁদের মা-ও স্বীকার করেন যে হাসপাতাল থেকে প্রথম বার ফেরার পর শিশুটির গায়ে অন্য পোশাক ছিল। সন্দেহ ঘনীভূত হলে বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর ভাইয়েরা সবাই ডিএনএ পরীক্ষা করান। আর সেই পরীক্ষার ফল দেখেই চমকে ওঠেন সকলে। তাঁদের সন্দেহ সত্যি প্রমাণিত হয়। দেখা যায় যাঁকে এতদিন দাদা বলে মানতেন তিনি আদৌ তাঁদের দাদা নন। এর পরেই হাসপাতালের পুরনো রেকর্ড ঘেঁটে তাঁরা আসল দাদাকে খুঁজে বের করেন।
 
 অবশেষে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে এই অদলবদলের ঘটনাটি ঘটেছিল। টোকিওর এক জেলা আদালত সান-ইকুকাই নামক ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ৩৮ মিলিয়ন ইয়েন (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২.২৭ কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে ৩২ মিলিয়ন ইয়েন পাবেন ওই ট্রাকচালক, বাকি অর্থ পাবেন তাঁর ভাইয়েরা, যাঁরা প্রথম এই তদন্ত শুরু করেন।
 
 সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ওই ট্রাকচালক বলেন, “প্রথমে আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি। সত্যি বলতে, আমি এটা মেনেও নিতে চাইনি... আমার জীবনটা হয়তো অন্য রকম হতে পারত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি সময়টা ফিরিয়ে দিতে পারবে? আমার জন্মের দিনটা ফিরিয়ে দিতে পারবে।” তিনি জানান, সত্যিটা জানার পর বেশ কয়েক মাস তিনি রোজ কাঁদতেন। “আমার আসল বাবা-মায়ের ছবি দেখে মনে হত, ইস যদি ওঁদের জীবন্ত দেখতে পেতাম! ওঁদের ছবি দেখলেই চোখের জল ধরে রাখতে পারতাম না।”
 
 
যে মহিলা তাঁকে বড় করেছেন, সেই পালিতা মা কে নিয়ে অবশ্য তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। বরং তিনি বলেন, “বহু কষ্ট ভোগ করে আমাদের বড় করেছেন তিনি।” সত্যি জানার পরেও দরিদ্র পরিবারটিকে ছেড়ে যাননি তিনি। বরং এখন তিনি তাঁদের দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন। জানা গিয়েছে, ধনী পরিবারের চার ভাই-ও (যিনি তাঁদের জায়গায় বড় হয়েছেন, তিনি-সহ) নিজেদের হারিয়ে যাওয়া বড়দাদার সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন।
 
 শিশুদের অদলবদলের ঘটনা এই প্রথম নয়, যদিও ছয় দশক ধরে সত্যি চাপা থাকাটা সত্যিই বিরল। এই মাসেই রাশিয়ায় দুই মহিলার ঘটনা সামনে এসেছে, যাঁদের সদ্যোজাত কন্যাসন্তানরা হাসপাতালেই বদলে গিয়েছিল। ১০২ দিন পর ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ভুল প্রমাণ হওয়ার পরেই মায়েরা নিজেদের আসল সন্তানকে ফিরে পান।
