ফিশ স্পা-নামটা শুনলেই যেন মনে আসে আরাম, রিল্যাক্সেশন আর ঝকঝকে পায়ের ছবি। সহজে বললে, মাছের কামড়ের দাওয়াই। ইদানীং অমজনতার মধ্যে বেশ জনপ্রিয় সেই পদ্ধতি। পা সুন্দর ও মসৃণ করতে অনেকেই তথাকথিত 'ফিশ স্পা' করান। ছোট ছোট মাছ ত্বকের মৃত কোষ তুলে দেয়, এতে পা নাকি ঝকঝকে হয়ে ওঠে, এই বিশ্বাসে মানুষ ভিড় জমায় এমন স্পা সেন্টারে। কিন্তু থাইল্যান্ডে এক মহিলার অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে এই চিকিৎসার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে ভয়াবহ বিপদ।

ছুটি কাটাতে গিয়ে ওই মহিলা গিয়েছিলেন থাইল্যান্ডের এক জনপ্রিয় ফিশ স্পা-তে। সেখানে জলের ট্যাঙ্কে পা ডুবিয়ে বসেছিলেন কিছু সময়ের জন্য। 'ডক্টর ফিশ' নামে পরিচিত গারা রুফা মাছগুলো পায়ের ত্বকে কামড় দিতে শুরু করে-সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু দেশে ফেরার কয়েকদিন পরই শুরু হয় সমস্যা। প্রথমে পায়ের আঙুল ফুলে ওঠে, তারপর দেখা দেয় ব্যথা ও লালচেভাব। তিনি ভেবেছিলেন সাধারণ সংক্রমণ, কিন্তু ব্যথা ক্রমে অসহ্য হয়ে ওঠে।

চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করতেই হতবাক হয়ে যান। তাঁরা বুঝতে ব্যাকটেরিয়াজনিত ভয়ানক এক হাড়ের সংক্রমণ মহিলার পায়ের ভিতর ছড়িয়ে পড়েছে। জানা যায়, সেই ব্যাকটেরিয়া এসেছে ফিশ স্পা-র দূষিত জল থেকে। সংক্রমণ এতটাই মারাত্মক ছিল যে অ্যান্টিবায়োটিকও কাজ করেনি। ধীরে ধীরে ব্যাকটেরিয়া হাড় ক্ষয়ে দেয়। শেষমেশ চিকিৎসকদের বাধ্য হয়ে মহিলার সবগুলো আঙুলই কেটে ফেলতে হয়, যাতে সংক্রমণ শরীরের বাকি অংশে না ছড়িয়ে পড়ে। 

‘ফিস স্পা’ ঠিক কী? গারা রুফা বা ‘ডক্টর ফিশ’ নামে ছোট ছোট মাছকে জলের ট্যাঙ্কে রাখা হয়। সেখানেই মানুষ পা ডুবিয়ে রাখে, আর মাছগুলো ত্বকের মৃত কোষ তুলে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি বেশ মজার মনে হলেও চিকিৎসকদের মতে, এই ফিশ স্পা যতটা জনপ্রিয়, ততটাই কিন্তু স্বাস্থ্যকর নয়। 

সমস্যার মূল কারণ হল সেই জলের ট্যাঙ্ক। প্রতিদিন বহু মানুষ একই ট্যাঙ্কে পা ডোবান। ফলে একবার যদি কারও ত্বকে ক্ষত বা জীবাণু থাকে, তা সহজেই অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাছাড়া মাছগুলোও জীবিত, তাই তাদের জীবাণুমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। কোনও ক্লিনিকই প্রতিবার নতুন জল বা নতুন মাছ ব্যবহার করে না। ট্যাঙ্কের জল বহু মানুষ ব্যবহার করেন, তাই সেটিকে জীবাণুমুক্ত রাখা কার্যত অসম্ভব। এই মাছগুলো এক ব্যক্তির পা থেকে অন্যজনের শরীরে সহজেই জীবাণু ছড়িয়ে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রক্রিয়ায় নানা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। কারও ত্বকে সামান্য কাটা বা ঘা থাকলে সেই পথে জীবাণু শরীরে ঢুকে যেতে পারে। এমনকী কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, হাড় পর্যন্ত সংক্রমণ ছড়িয়ে ভয়ানক অবস্থা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি ফিশ স্পা থেকে সংক্রমিত ব্যাকটেরিয়ার জন্য থাইল্যান্ডে এক মহিলার পায়ের আঙুল কেটে ফেলতে হয়েছে। যা এই স্পা-এর ভয়াবহ দিকটি যেন চোখে আঙুল দিয়ে তুলে ধরেছে।

ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্বকের মৃত কোষ দূর করার আরও নিরাপদ উপায় রয়েছে। যেমন স্ক্রাব, পিউমিক স্টোন বা পেডিকিউর। এই সবের মাধ্যমে একই ফল পাওয়া যায়। কিন্তু সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক কম।

যাদের ডায়াবেটিস, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ত্বকে কোনও ক্ষত আছে, তাদের জন্য ফিশ স্পা একেবারেই করা উচিত নয়। এতে সংক্রমণ দ্রুত ও মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সবমিলিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, ফিশ স্পা যতই আকর্ষণীয় মনে হোক, এটি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আরাম বা সৌন্দর্যের নামে এমন ঝুঁকি নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাই পা সুন্দর রাখতে চাইলে প্রাকৃতিক ও পরিচ্ছন্ন পদ্ধতিই হোক সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প।