চা ছাড়া দিন শুরু হয় না অনেকেরই। তাঁদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এই পানীয়। দুধ এবং চিনি দেওয়া চা খেতে ভালবাসেন, এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। অথচ চিনি শরীরের অনেক ক্ষতি করে। বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেড়ে যায় আরও। 

পুষ্টিবিদ এবং ডায়েটিশিয়ানরা পরামর্শ দেন চিনি বাদ দিয়ে প্রাকৃতিক মিষ্টি ব্যবহার করার, যা শুধু স্বাদেই ভাল নয়, স্বাস্থ্যের পক্ষেও উপকারী। এখানে কিছু স্বাস্থ্যকর বিকল্প দেওয়া হল—

মধু

মধু একটি জনপ্রিয় প্রাকৃতিক সুইটনার, যার রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ। পুষ্টিগুণ অটুট রাখতে চাইলে মধু চায়ে ঢালতে হবে চা নামানোর পর। মধু হজমশক্তি বাড়ায়, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হালকা প্রাকৃতিক মিষ্টি দেয়। শীতকালে এটি শরীর গরম রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ কার্যকর।

গুড়

ভারতের অনেক গ্রামে গুড়ের চা আজও খুব জনপ্রিয়। আয়রন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ গুড় চিনির থেকে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। তবে গুড় দেওয়ার পর চা বেশি সময় ধরে না ফোটানো ভাল, যাতে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট না হয়। শীতকালে গুড়ের চা শরীর গরম রাখতে ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।

যষ্টিমধু

আয়ুর্বেদে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত যষ্টিমধু স্বাভাবিকভাবেই মিষ্টি এবং এর রয়েছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা। যষ্টিমধু দিয়ে তৈরি চা ঠান্ডা, কাশি এবং গলাব্যথা উপশমে সহায়ক। এটি দারুচিনি বা লবঙ্গের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং স্বাদও উন্নত হয়।

খেজুরের সিরাপ

খেজুরের সিরাপ ঘন এবং মিষ্টি হয়, তাই এটি অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত। এতে রয়েছে ফাইবার, আয়রন এবং প্রয়োজনীয় খনিজ যা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কালো চা বা দুধ চায়ে খেজুরের সিরাপ যোগ করলে স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই বাড়ে। তবে বেশি ব্যবহার করলে চা অত্যধিক ঘন হয়ে যেতে পারে, তাই পরিমিতি বজায় রাখা জরুরি।

ড্রাই ফ্রুটস

কিশমিশ এবং খেজুরের মতো ড্রাই ফ্রুট দুধে ফোটালে চা স্বাভাবিকভাবেই মিষ্টি হয়। এতে শুধু স্বাদই বাড়ে না, বরং ভিটামিন, ফাইবার এবং খনিজও মেলে। কিশমিশ-খেজুরের চা বিশেষত শীতকালে শরীর গরম রাখে এবং হালকা প্রাকৃতিক মিষ্টি স্বাদ দেয়।

চা আমাদের জীবনের সঙ্গে কমবেশি জড়িয়ে আছে। তবে সঠিক উপায়ে পান করলে সেটি শুধু স্বাদের আনন্দই দেয় না, দীর্ঘমেয়াদে সুস্থতাও বজায় রাখে। স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নেওয়ার মাধ্যমে আমরা একদিকে শরীরকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারি, অন্য দিকে প্রতিদিনের এই অভ্যাসকে আরও পুষ্টিকর করে তুলতে পারি। সচেতনভাবে সামান্য পরিবর্তন এনে চাও হতে পারে শরীর ও মনের সত্যিকারের সঙ্গী।