মূলত পাহাড়ি উপত্যকার খাবার হলেও বেশ অনেক কয়েক বছর ধরে সমতল ভূমিতেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোমো। বড় রেস্তঁরা থেকে পাড়ার দোকান, সর্বত্রই মোমোর চাহিদা তুঙ্গে। অন্যান্য তেলে ভাজা কিংবা স্ট্রিট ফুডের চেয়ে স্বাস্থ্যকর বিকল্প ভেবে অনেকে টুকটাক খিদে পেলে স্টিম মোমোতে কামড় বসান। স্বাদ বদলে ফ্রায়েড মোমো, প্যান ফ্র্যায়েজ, চিজ মোমো সহ আরও অন্যান্য বাহারি মোমোও পছন্দ করেন আট থেকে আশি। কিন্তু নিয়মিত মোমো খাওয়ার অভ্যাস কি আদৌ স্বাস্থ্যকর? বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে হার্ট সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। সম্প্রতি এক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, নিয়মিত মোমো খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি থেকে শুরু করে হৃদরোগের ঝুঁকি পর্যন্ত উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যেতে পারে।
ঠিক কোন কারণে সমস্য বাড়ে? প্রথমত, মোমোর খোল তৈরি হয় রিফাইন্ড ময়দা দিয়ে, যার মধ্যে ফাইবার প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে এটি দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। প্রতিদিন বা বার বার এই ধরনের রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট শরীরে জমে ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স তৈরি করতে পারে। এতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওজন বাড়ার পাশাপাশি টাইপ–২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মোমো খেয়ে পেট ভরলেও শরীর সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না।
দ্বিতীয়ত, স্ট্রিট ফুড হিসেবে মোমোতে পরিচ্ছন্নতার অভাবের আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অপরিষ্কার পরিবেশে খোলা অবস্থায় রাখা মোমোতে ই.কোলাই, কলিফর্ম সহ বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকে। এগুলো শরীরে ঢুকলে ডায়রিয়া, বমি, পেটব্যথা, গ্যাস্ট্রিক, পেটে অস্বস্তির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে যায়।
তৃতীয়ত, মোমোর সঙ্গে যে টক–ঝাল চাটনি দেওয়া হয় তাতে সোডিয়াম বা নুনের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি থাকে। অতিরিক্ত নুন শরীরে জলধারণ, রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃদযন্ত্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
আবার অনেক দোকানে মোমো ফ্রাই করার জন্য একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়, যার ফলে তেলে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয়। এটি সরাসরি ধমনীতে প্লাক জমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ।
এছাড়া অনেক মোমোর ভেতরে থাকে এমন সবজি বা নিম্নমানের মাংস থাকে, যেগুলোতে পুষ্টিগুণ কম। ফলে নিয়মিত মোমো খেলে শরীরে ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবারের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। পাচনতন্ত্র দুর্বল হয়ে যেতে পারে, অ্যাসিডিটি ও ফুলে থাকার সমস্যা দেখা দেয়।
তাহলে কি মোমো একেবারেই খাওয়া যাবে না? বিশেষজ্ঞরা বলছেন—মাঝেমধ্যে খেলে সমস্যা নেই, তবে অভ্যাস করা চলবে না। খেলে স্টিমড মোমো বেছে নিন, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন দোকান থেকে কিনুন এবং চাটনি কম খান। চাইলে ঘরেই সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর উপায়ে আটা বা মিলেট দিয়ে মোমো তৈরি করতে পারেন। মনে রাখবেন, মোমো সুস্বাদু ঠিকই, কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকিও কম নয়। তাই সতর্ক হয়ে খাওয়াই শ্রেয়।
