তুলসি গাছ প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই দেখা যায়। এই গাছের পুজোও করা হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন, তুলসি পাতায় ভিটামিন সি, জিঙ্ক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে? এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত তুলসি সেবন করলে সর্দি-কাশি এবং ঋতুগত সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। এই কারণেই আয়ুর্বেদে তুলসিকে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক বলা হয়।
সর্দিকাশি এবং শ্বাসকষ্টে উপকারি
তুলসি পাতা খেলে কফ এবং শ্লেষ্মা বার হতে সাহায্য করে। হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এবং সর্দি-কাশিতে ভোগা রোগীদের জন্য তুলসি পাতা বিশেষ উপকারী। তুলসি পাতার ক্বাথ বা চা ফুসফুস পরিষ্কার করে এবং শ্বাস নিতে আরাম দেয়।
হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী
তুলসিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তুলসি পাতা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং কোলেস্টেরল কমে যায়। এর ফলে হৃদযন্ত্র শক্তিশালী হয় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। এছাড়া এটি রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
পেটের সমস্যায় উপশম
তুলসি সেবনে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অম্বলের সমস্যা দূর হয়। এটি হজমের এনজাইম সক্রিয় করে এবং ক্ষুধা বাড়ায়। খালি পেটে তুলসি পাতা খেলে অনেক ধরনের পেটের অসুখ সারে। অনিদ্রার সমস্যায় তুলসির চা বা ক্বাথ পান করলে মন শান্ত হয় এবং ভাল ঘুম আসে।
ত্বক এবং চুলের যত্নে তুলসি
তুলসি পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে, যা ত্বককে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত সেবনে মুখে উজ্জ্বলতা আসে এবং ব্রণ দূর হয়। তুলসি চুল পড়া রোধ করে এবং খুশকির সমস্যা কমায়। আয়ুর্বেদে তুলসিকে জ্বরের প্রাকৃতিক ওষুধ বলা হয়। ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গুর মতো রোগে তুলসির ক্বাথ পান উপকারী।
ক্যানসার প্রতিরোধ এবং মুখের যত্নে
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ সত্যেন্দ্র সাহুর মতে, গবেষণায় দেখা গিয়েছে, তুলসি পাতায় এমন উপাদান রয়েছে যা ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। তুলসি শরীরকে ডিটক্স করে এবং ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে। তুলসি পাতা চিবোলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়, দাঁত মজবুত হয়। ক্যাভিটি এবং মাড়ির প্রদাহ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
তুলসি খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি
সকালে খালি পেটে চার–পাঁচটি তাজা তুলসি পাতা খাওয়া সবচেয়ে উপকারী। নিয়মিত তুলসির চা বা ক্বাথও পান করা যায়। তবে তুলসী পাতা অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে থাকা ইউজেনল বেশি পরিমাণে শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
তুলসি শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসেই নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অমূল্য ভেষজ। এই পাতা শরীরকে রোগ থেকে রক্ষা করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি উন্নত করে এবং মন-শরীরকে চাঙ্গা রাখে। তবে যে কোনও ভেষজের মতোই এরও সীমিত এবং সঠিক মাত্রায় সেবন করা জরুরি। নিয়ম মেনে তুলসিকে জীবনের অংশ করে তুললে তা প্রকৃত অর্থেই সুস্থ এবং দীর্ঘায়ু জীবনের সহায়ক হতে পারে।
