২০ বছর বয়স থেকে কিছু বছরকে জীবনের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সময় বলে মনে করা হয়। এই বয়সেই কেরিয়ার গড়া, স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন এবং স্বাধীনভাবে বাঁচার স্বাদ পাওয়া যায়। কিন্তু এই সময়েই করা কিছু ভুল অভ্যাস ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই পরবর্তী জীবনে ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগের বীজ রোপণ হয় এই বয়সেই। তখন রোগ চোখে না পড়লেও ভিতরে ভিতরে তার ভিত্তি তৈরি হতে থাকে। জেনে নেওয়া যাক, এমনই কয়েকটি অভ্যাস সম্পর্কে যেগুলি অজান্তেই বড় বিপদের কারণ হতে পারে।

ঘুমের ঘাটতি
তরুণ-তরুণীদের মধ্যে দেরি করে ঘুমনো ও কম ঘুম খুবই সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমের অভাব শরীরের সার্কেডিয়ান রিদমকে ব্যাহত করে। এই রিদম আমাদের ইমিউন সিস্টেম ও ডিএনএ মেরামতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। দীর্ঘদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের ডিএনএ রিপেয়ার করার ক্ষমতা কমে যায়, ফলে ক্যানসার কোষ বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়তে পারে।

অতিরিক্ত প্রসেসড খাবার খাওয়া
প্যাকেটজাত খাবার, ফাস্ট ফুড, ইনস্ট্যান্ট স্ন্যাকস ও মিষ্টি পানীয় এখন তরুণ-তরুণীদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার বড় অংশ। এসব খাবারে থাকে অতিরিক্ত প্রিজারভেটিভ ও অ্যাডিটিভ, কিন্তু ফাইবার থাকে খুব কম। এর ফলে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ তৈরি হয়, হজম ও হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যা ভবিষ্যতে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা
অফিসের কাজ, অনলাইন ক্লাস কিংবা মোবাইল ব্যবহারের কারণে অনেকেই দিনে ৮-১০ ঘণ্টা একটানা বসে থাকেন। চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘসময় বসে থাকার অভ্যাস কোলন ও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই মাঝেমধ্যে উঠে হাঁটা, স্ট্রেচ করা বা হালকা শরীরচর্চা করা জরুরি।

ভিটামিন ডি-র ঘাটতিকে গুরুত্ব না দেওয়া
সূর্যের আলো কম পাওয়া ও ইনডোর জীবনযাপনের কারণে ভিটামিন ডি-এর অভাব দেখা দেয়। এই ভিটামিনের ঘাটতির সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের যোগ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। নিয়মিত পরীক্ষা, প্রয়োজন অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট এবং পর্যাপ্ত রোদে থাকার মাধ্যমে এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব।

সোশ্যাল স্মোকিং ও ভেপিং
অনেক তরুণ-তরুণী মনে করেন, মাঝেমধ্যে ধূমপান করলে তেমন ক্ষতি হয় না। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সামান্য পরিমাণ ধূমপানও ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই ক্ষতি ভবিষ্যতে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০-এর কোঠায় নেওয়া ছোট ছোট সিদ্ধান্তই ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে। সময় থাকতে এই ভুল অভ্যাসগুলো বদলাতে পারলে সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের পথ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। তাই আজ থেকেই সচেতন হওয়াই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।