আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুভেম্বরে (moustache-november) পুরুষদের গোঁফ রেখে ক্যানসার সচেতনতার কথা আমরা সবাই কমবেশি জানি। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে পুরুষদের শেভ না করার আহ্বান জানিয়ে প্রোস্টেট ও টেস্টিকুলার ক্যানসার নিয়ে আলোচনা শুরু করাই এই আন্তর্জাতিক উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। কিন্তু এবার এই পুরুষকেন্দ্রিক আলোচনাকে সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা দিল একটি স্বাধীন রেজর ব্র্যান্ড- Billie
একটি ভাইরাল হয়ে যাওয়া নতুন বিজ্ঞাপন অভিযানে Billie মহিলাদেরও মুভেম্বরে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছে- নিজেদের গোঁফ বা ওপরের ঠোঁটের লোম লুকিয়ে না রেখে, বরং তা নিয়ে গর্ব করার বার্তা দিয়ে। বিজ্ঞাপনটি প্রকাশের সময় ব্র্যান্ডটি যে ক্যাপশন ব্যবহার করেছে, তা ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সেখানে লেখা- “সংবাদ সতর্কতা: মহিলাদেরও গোঁফ থাকে। আমাদের শেখানো হয়েছে এগুলো লুকোতে- ওয়াক্স করতে, ব্লিচ করতে, শেভ করতে। কিন্তু তাতে এগুলো অদৃশ্য হয় না। হালকা হোক বা গাঢ়- লোম তো থাকেই। তাই এই মুভেম্বরে আমরা আমাদের (এতদিনের) গোপন ওপরের ঠোঁটের লোম বাড়তে দিচ্ছি।”
এই রসিকতা-মেশানো কিন্তু তীক্ষ্ণ বার্তাবাহী ভিডিওতে দেখা যায়, বাস্তব জীবনের মহিলারা- কারও মুখে হালকা, কারও মুখে স্পষ্ট গোঁফ- সেগুলোকে সাজাচ্ছেন। কেউ গোঁফে মাসকারা লাগাচ্ছেন, কেউ চিরুনি চালাচ্ছেন, কেউ আবার জেল দিয়ে স্টাইল করছেন। উজ্জ্বল লিপস্টিক দিয়ে গোঁফকে আরও চোখে পড়ার মতো করে তোলা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রতীকীভাবে ফেলে দেওয়া হচ্ছে ওয়াক্স স্ট্রিপ ও টুইজার- যেন সমাজের আরোপিত সৌন্দর্যবোধকে সরিয়ে ফেলার ঘোষণা।
এই বিজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে Billie হয়ে উঠেছে প্রথম মহিলা রেজর ব্র্যান্ড, যারা মুভেম্বরে অংশ নিয়ে প্রকাশ্যে মহিলাদের মুখের লোম দেখিয়েছে। শুধু সৌন্দর্য সংক্রান্ত আলোচনাই নয়, এই প্রচারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো প্রোস্টেট ও টেস্টিকুলার ক্যানসার সচেতনতা ও তহবিল সংগ্রহ। অর্থাৎ, মহিলার শরীর নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পুরুষদের স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনাকেও আরও বিস্তৃত সামাজিক পরিসরে নিয়ে আসা।
ব্র্যান্ড কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী, এই প্রচারের মূল উদ্দেশ্য খুব সরল- মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া যে মহিলাদেরও লোম থাকে, এবং সেটি কোনও অস্বাভাবিক বা লজ্জার বিষয় নয়। সমাজ যেভাবে মহিলাদের শরীরকে ‘মসৃণ’, ‘নির্মল’ ও ‘লোমহীন’ করে কল্পনা করতে অভ্যস্ত, এই প্রচার সেই ধারণাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়।
এটিই প্রথম নয়। এর আগেও Billie তাদের বিজ্ঞাপনে বগলের ও গোপনাঙ্গের লোম নিয়ে খোলামেলা আলোচনা শুরু করেছিল, যেখানে মডেলদের শরীরে বাস্তব লোম দেখানো হয়েছিল- যা বিজ্ঞাপনের জগতে তখনও ছিল বিরল। সেই প্রচারেও ব্র্যান্ডের অবস্থান ছিল স্পষ্ট: মহিলারা চাইলে শেভ করবেন, কিন্তু সমাজের চাপে নয়।
নতুন এই মুভেম্বার প্রচার সেই একই দর্শনের ধারাবাহিকতা- যেখানে সৌন্দর্য মানে বাধ্যবাধকতা নয়, বরং পছন্দ। গোঁফ রাখবেন কি রাখবেন না, শেভ করবেন কি করবেন না- সিদ্ধান্ত মহিলাদের নিজের।
এই প্রচার ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসা ও বিতর্ক- দুই-ই তৈরি করেছে। কিন্তু একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, Billie আবারও এমন এক আলোচনার দরজা খুলেছে, যেখানে মহিলাদের শরীর, সৌন্দর্য ও রাজনীতির প্রশ্ন একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে যায়- এবং সেই আলোচনাকে আর উপেক্ষা করা যায় না।
