আজকাল ওয়েবডেস্ক: দাঁতে অসহ্য যন্ত্রণা বা শিরশিরানি? অবহেলা করছেন? এই সমস্যাই কিন্তু ক্যাভিটি বা দন্তক্ষয়ের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। দাঁতের যত্ন নিয়ে আমরা কমবেশি সকলেই সচেতন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্যাভিটির সমস্যায় ভোগেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। আমাদের রোজকার জীবনযাত্রা এবং বিশেষ করে খাদ্যতালিকাই এর জন্য মূলত দায়ী।

অনেকেই ভাবেন, কেবল চকোলেট বা মিষ্টি খেলেই বুঝি দাঁতের ক্ষতি হয়। দন্তচিকিৎসকদের মতে, এই ধারণা সম্পূর্ণ ঠিক নয়। এমন অনেক খাবার আমাদের রোজকার পাতে থাকে, যা অজান্তেই দাঁতের এনামেলের বর্ম ভেদ করে ডেকে আনে বিপদ। মুখের ভিতরের ব্যাকটেরিয়া এই খাবারগুলির শর্করাকে ব্যবহার করে এক ধরনের অ্যাসিড তৈরি করে, যা ধীরে ধীরে দাঁতের উপরের শক্ত আস্তরণ বা এনামেলকে ক্ষয় করতে শুরু করে। এর ফলেই তৈরি হয় গহ্বর বা ক্যাভিটি।
আসুন দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন খাবার রয়েছে এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে।
১। চিপস এবং ময়দার তৈরি খাবার: আলুর চিপস, পাউরুটি, বিস্কুট বা ময়দার তৈরি যে কোনও নোনতা খাবার খাওয়ার সময় আমরা মিষ্টির মতো অতটা সতর্ক থাকি না। কিন্তু এই স্টার্চ বা শ্বেতসার জাতীয় খাবার মুখের লালার সঙ্গে মিশে খুব দ্রুত শর্করায় পরিণত হয়। এগুলি দাঁতের খাঁজে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকে এবং ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা ক্যাভিটির অন্যতম প্রধান কারণ।
২। কোল্ড ড্রিঙ্ক এবং প্যাকেটজাত ফলের রস: এই পানীয়গুলি ‘ডবল অ্যাটাক’ করে। প্রথমত, এতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। দ্বিতীয়ত, এগুলিতে থাকা সাইট্রিক এবং ফসফরিক অ্যাসিড সরাসরি দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে। একবারে অনেকটা খাওয়ার চেয়ে, সারাদিন ধরে অল্প অল্প করে এই পানীয়গুলি খেলে দাঁতের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।
৩। আঠালো ক্যান্ডি ও টফি: লজেন্স, টফি বা চুইংগামের মতো আঠালো মিষ্টি খাবার দাঁতের সবচেয়ে বড় শত্রু। এগুলি দাঁতের সঙ্গে এমনভাবে আটকে থাকে যে, সাধারণ কুলকুচিতেও যেতে চায় না। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাকটেরিয়া অ্যাসিড তৈরির সুযোগ পেয়ে যায়।
৪। শুকনো ফল (ড্রায়েড ফ্রুটস): কিশমিশ, এপ্রিকট বা এই জাতীয় শুকনো ফলকে স্বাস্থ্যকর মনে হলেও, এগুলি আসলে চিনির ঘনীভূত রূপ। পাশাপাশি এগুলি বেশ আঠালো হওয়ায় দাঁতের খাঁজে আটকে গিয়ে ক্যাভিটির ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
৫। অতিরিক্ত টক জাতীয় ফল ও ভিনিগার: লেবু, আঙুর বা অতিরিক্ত টক জাতীয় ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসিড থাকে, যা দাঁতের এনামেলকে দুর্বল করে দেয়। একই ভাবে স্যালাডে ব্যবহৃত ভিনিগার বা আচারের অম্লতাও দাঁতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দুর্বল এনামেলে ক্যাভিটি হওয়ার আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
কী করণীয়?
দন্তবিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের খাবার খাওয়ার পরেই মুখ ভাল করে জল দিয়ে কুলকুচি করে নেওয়া জরুরি। শ্বেতসার বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পর ব্রাশ করার অভ্যাস করুন। মিষ্টি পানীয় স্ট্র দিয়ে খেলে তা দাঁতের সংস্পর্শে কম আসে। আর সবচেয়ে বড় কথা, নিয়মিত দু'বেলা ব্রাশ, ফ্লসিং এবং বছরে অন্তত একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। সুতরাং, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝুন। খাদ্যতালিকা সম্পর্কে সামান্য সচেতনতাই পারে আপনাকে ক্যাভিটির যন্ত্রণা থেকে দূরে রাখতে।
