আজ কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। সকাল থেকে শুরু হয়ে গেছে পুজোর জোগাড়ের তোড়জোড়। দেবী লক্ষ্মীর আরাধানায় অনেকে নির্জলা উপোস করেন। বেশিরভাগ বাড়িতেই বিকেলের দিকে লক্ষ্মীপুজো করা হয়। ফলে সারাদিন উপোস করে থাকার কারণে শরীরে নানা গোলযোগ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া থেকে শুরু করে মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, বমিভাব বা দুর্বলতার মতো সমস্যা দেখা দেয়। সঙ্গে আবার সঠিকভাবে উপোস না ভাঙলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স, গ্যাস-অম্বল হতে পারে। এমনকী উপোসের ধকল সামলে উঠতে বেশ কয়েকদিন সময়ও লেগে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘক্ষণ উপবাসে শরীরের হজম-উৎসেচকের উৎপাদন অনেক কমে যায়। ফলে পাকস্থলী একধরনের বিশ্রাম অবস্থায় চলে যায়। যখন অনেকক্ষণ পর হঠাৎ খাবার প্রবেশ করে, তখন এই নিষ্ক্রিয় উৎসেচকগুলো তা সঠিকভাবে হজম করতে পারে না। তাই পেট ফাঁপা, গ্যাস, বমি ভাব ও পেট ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দেয়। একদিকে উপোসের পর প্রথমেই যেমন ভারী খাবার খাওয়া উচিত নয়, আবার ঠিক কোন খাবার খেলে শরীর ফিট থাকবে তা খেয়াল রাখাও প্রয়োজন। বিশেষত উপোস ভাঙার সময় খাবারের ক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ খাবারের পরিমাণ বা ধরন ভুল হলে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাহলে লক্ষ্মীপুজোয় উপোস ভাঙার সময়ে কোন কোন নিয়ম মেনে চলবেন জেনে নিন-
আরও পড়ুনঃ পুজোয় উপোস করলেও আসবে না ক্লান্তি! এই সব পানীয়তে চুমুক দিলেই শরীর থাকবে চাঙ্গা
*ফল বা ফলের রস দিয়ে শুরু করুনঃ তরমুজ, পেঁপে, আঙুর, আপেলের মতো হালকা ফল বা চিনির ফলের রস শরীরকে দীর্ঘক্ষণ না খাওয়ার পর শক্তি দেয় এবং হজমে সাহায্য করে। এগুলো পাকস্থলীতে কোনও চাপ সৃষ্টি করে না।
*এরপর খান দই বা ছাছঃ টক দই বা ছাছ অন্ত্রের জন্য খুব উপকারী। দীর্ঘ উপবাসের পর এগুলো অন্ত্রের প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
*তারপর খান হালকা শাকসবজি বা স্যুপঃ রান্না করা বা সেদ্ধ শাকসবজি, বিশেষ করে গাজর, লাউ, টমেটো বা মুগ ডালের স্যুপ, শরীরকে প্রোটিন ও ভিটামিন দেয়, অথচ হজমেও কোনও সমস্যা করে না। ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি ও ফল শরীরকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ জোগান দেয়।
*সবশেষে ধীরে ধীরে খান শস্য, ডাল বা রুটিঃ উপোস ভাঙার এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর ভারী খাবার খাওয়া যেতে পারে। যেমন রুটি, ভাত, ডাল বা সবজি। তবে অতিরিক্ত তেল-মশলা এড়িয়ে চলা উচিত।
*প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণঃ উপোসের পর শরীরে কলা-কোষ মেরামতির জন্য প্রোটিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্মীপুজোর দিন আমিষ না খাওয়ারই চল রয়েছে। সেক্ষেত্রে পনির, সয়াবিনের মতো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান।

যেসব ভুল কখনও করবেন না
• উপোসের পর একেবারে ভাজাভুজি খাবেন না। এতে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
• মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলুন। বেশি মিষ্টি খাবার কিংবা পানীয়তে চুমুক দিলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
• ঠান্ডা পানীয় বা বরফ মেশানো জল এড়িয়ে চলুন, এতে পাকস্থলীতে হঠাৎ ধাক্কা লাগে।
• সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে খুব খিদে পেয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। যা থেকে ওভারইটিংয়ের প্রবণতা বাড়ে। কিন্তু উপোস ভাঙার সময়ে ধীরে ধীরে ও অল্প করে খান। একবারে বেশি খাওয়ার চেয়ে ছোট ছোট পরিমাণে সহজপাচ্য খাবার বারবার খেলে হজমের সমস্যায় পড়বেন না।
