ত্বকের বয়স বেড়ে যাওয়া মানে সাধারণত বলিরেখা, ঢিলেভাব, দাগ-কে বোঝায়- যেন সব পরিবর্তন ত্বকের ওপর থেকে শুরু হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। গবেষকদের মতে, বয়সের ছাপ প্রথমে তৈরি হয় ত্বকের ভেতরের স্তরে, যেখানে কোষীয় পরিবর্তন হয়। বিশেষ করে কোলাজেন ও ইলাস্টিনের অবক্ষয় হতে পারে। যা শরীরের স্বাভাবিক মেরামত প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। ফলে বাহ্যিক চেহারায় ধীরে ধীরে বলিরেখা, বয়সের ছাপ দেখা দেয়। আর এখানেই গুরুত্ব পাচ্ছে কপার পেপটাইড। 

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রচলিত লেজার ফেসিয়াল বা বোটক্স শুধু ত্বকের উপরের স্তর সাময়িকভাবে মসৃণ করে, কিন্তু ত্বকের গভীর কোষীয় সমস্যাকে সরাসরি লক্ষ্য করতে পারে না। ফলে এগুলোর প্রভাব থাকে স্বল্পমেয়াদি। যদিও দীর্ঘদিন ধরে বাহ্যিক ট্রিটমেন্টই ছিল ত্বকের বয়স কমাতে মানুষের প্রধান ভরসা, নতুন গবেষণা বলছে, মূল চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে কোষের ভেতরে।

কীভাবে কাজ করে কপার পেপটাইড?গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু নির্দিষ্ট পেপটাইড ত্বক কোষের সঙ্গে 'বার্তা আদান-প্রদানের' মতো যোগাযোগ তৈরি করতে পারে। এরা শরীরের স্বাভাবিক 'রিপেয়ার সিগন্যাল'কে সক্রিয় করে ত্বকের গভীরে থাকা কোলাজেন-ইলাস্টিন তৈরির প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। 

প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণায় অনুমান করা হচ্ছে, এই ধরনের পেপটাইড দেহের ভেতরের 'রিপেয়ার মেকানিজম'-কে উৎসাহিত করে ত্বকের মজবুতভাব, ধরন ও সামগ্রিক মানকে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। 

কেন বোটক্স-লেজার কাজ হয়েও সমস্যার মূলে পৌঁছাতে পারে না? ত্বকের বয়স বাড়ার প্রধান কারণ হল গভীর স্তরে থাকা সাপোর্ট স্ট্রাকচারের দুর্বলতা। বোটক্স বা লেজারের মতো ট্রিটমেন্ট ত্বকের ওপরের চেহারাকে পাল্টাতে পারে। যার জন্য কারওর বলিরেখা কমে, কেউ উজ্জ্বলতা পায়-কিন্তু এসব চিকিৎসা ত্বকের ভেতরের জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে বদলাতে পারে না। ফলে সমস্যার 'ফাউন্ডেশন' একই থাকে।

টপিকাল স্কিনকেয়ার ক্রিম ও সিরাম সাধারণত বাইরের স্তরে কাজ করে। কিন্তু গবেষকেরা বলছেন, পেপটাইড-ভিত্তিক সমাধান কোষের অভ্যন্তরে লক্ষ্যভিত্তিক সংকেত পাঠানোর সম্ভাবনা তৈরি করে, যা ত্বকের বয়স কমানোর ধারণাকে নতুন দিশা দেখাতে পারে। ফলে কসমেটিক বিজ্ঞান এখন শরীরের ভেতর থেকে মেরামত করতে বেশি আগ্রহী।

যদিও কপার পেপটাইড নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। তবে গবেষকরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, এগুলি কখনওই ওষুধ নয়, কোনও রোগ সারানোর ক্ষমতা নেই এবং এখনও মানবদেহে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিতও নয়। আপাতত শুধুমাত্র গবেষণামূলক আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। তাই কোনও স্কিনকেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই জরুরি।