গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক প্রথম সারির তারকারা নিজেদের ব্যক্তিগত ও পাবলিসিটি অধিকার রক্ষায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন থেকে আশা ভোঁসলে, সুনীল শেঠি -অনেক তারকাই হাইকোর্টে মামলা করেছেন, যাতে তাঁদের নাম, ছবি বা পরিচয় কেউ নিজের পেশাগত বা ব্যক্তিগত লাভের জন্য অপব্যবহার করতে না পারে। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হলেন অভিনেত্রী শিল্পা শেট্টি কুন্দ্রা।
শিল্পার আইনজীবীর দাবি, তাঁর পরিচয়ের অননুমোদিত বাণিজ্যিক ব্যবহার সরাসরি শিল্পার সুনাম ও মর্যাদার ওপর আঘাত। সেই অভিযোগেই শিল্পা বোম্বে হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে তাঁর পার্সোনালিটি রাইটস–এর সুরক্ষা চাওয়া হয়েছে।
মামলায় একাধিক ওয়েবসাইটের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলি নাকি শিল্পার ছবি বেআইনিভাবে প্রচারমূলক কাজে ব্যবহার করেছে। শুধু তাই নয়, শিল্পার সঙ্গে যুক্ত ভুয়ো ছবি ও ভিডিও নিয়েও আদালতের নজর আকর্ষণ করা হয়েছে। নথি অনুযায়ী, মামলায় এখন পর্যন্ত ২৭ জন অভিযুক্ত রয়েছেন। পাশাপাশি ‘জন ডো’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে শত শত অজ্ঞাত ব্যক্তি বা প্ল্যাটফর্মকে।
শিল্পার হয়ে মামলাটি দায়ের করা আইনজীবী সানা রইস খান বলেন, “দশকের পর দশক পরিশ্রম করে শিল্পা শেট্টি নিজের পরিচিতি ও সুনাম গড়ে তুলেছেন। তাঁর সম্মতি ছাড়া কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা তাঁর নাম বা চেহারা ব্যবহার করতে পারে না। শিল্পার পরিচয়ের অননুমোদিত বাণিজ্যিক শোষণ তাঁর মর্যাদা ও কষ্টার্জিত সুনামের ওপর চরম আঘাত। কোনও ব্যক্তি বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের আইনবহির্ভূত বাণিজ্যিক লাভের জন্য তাঁর সুনাম ব্যবহার করার অধিকার নেই। আমরা বোম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি, যাতে এই ধরনের অপব্যবহারকে অবিলম্বে বন্ধ করা যায় এবং শিল্পার পরিচয়কে কোনওভাবেই পণ্যে পরিণত করা না হয়।”
তা কী এই পার্সোনালিটি রাইটস?
তারকাদের পার্সোনালিটি রাইটসের মধ্যে পড়ে তাঁদের নাম, কণ্ঠস্বর, স্বাক্ষর, ছবি অথবা এমন কোনও বৈশিষ্ট্য, যা সাধারণ মানুষ তাঁদের সঙ্গে সহজেই চিহ্নিত করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে বহু তারকা হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছেন, কারণ এআই-জেনারেটেড কনটেন্ট ও ডিপফেক তাঁদের এই অধিকার এবং সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে থাকা গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করছে।একই সঙ্গে, কপিরাইট আইন, ১৯৫৭–এর অধীনে থাকা তাঁদের নৈতিক অধিকার সুরক্ষার দাবিও তুলে ধরা হয়েছে।
এর আগেও বিভিন্ন হাইকোর্ট একাধিক তারকার পার্সোনালিটি রাইটসের পক্ষে রায় দিয়েছে -অমিতাভ বচ্চনের
স্বতন্ত্র কণ্ঠ, অনিল কপূর ও জ্যাকি শ্রফের আলাদা অভিনয়-স্টাইল, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন ও অভিষেক বচ্চনের ছবি, এমনকী রজনীকান্তের নাম পর্যন্ত আইনের সুরক্ষা পেয়েছে।
শিল্পা শেট্টির মামলা সেই ধারাবাহিকতাতেই আরও এক গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে উঠতে পারে -ডিজিটাল যুগে সেলিব্রিটিদের পরিচয় যে আর অবহেলার বিষয় নয়, তা ফের একবার স্পষ্ট।
