হট চকোলেট খেতে ভালবাসেন না, এমন মানুষ বোধ হয় খুঁজলেও পাওয়া যায় না। এটি শুধু সুস্বাদুই নয়, উপকারীও বটে। হট চকোলেটে থাকা কোকো বার্ধক্যেও স্মৃতিশক্তি ভাল রাখতে সাহায্য করে।
চকলেটের মূল উপাদান কোকো শুধু স্বাদের জন্যই নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও বিশেষভাবে উপকারী। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কোকোর ভেতরে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভোনয়েড মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে কোকোর প্রভাব আজ বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীরা স্বীকৃত করেছেন।
কোকোতে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড, পলিফেনল ও থিওব্রোমিন রয়েছে। এরা মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে এবং স্নায়ুকোষকে সক্রিয় রাখে। ফলে মস্তিষ্কে নতুন স্নায়ুতন্তু গঠনে সহায়তা হয় এবং নিউরনের মধ্যে যোগাযোগ শক্তিশালী হয়।
ফ্ল্যাভোনয়েডস:
এটি একধরনের পলিফেনল, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অংশে নতুন নিউরনের গঠন বাড়ায়।
স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে ও দীর্ঘমেয়াদে তথ্য সংরক্ষণে সাহায্য করে।
থিওব্রোমিন:
মানসিক সতর্কতা ও মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন:
মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ, যা নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণ ও স্নায়ুকোষের সুস্থ কার্যক্রমে সহায়তা করে।
কোকো ও স্মৃতিশক্তির সম্পর্ক
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি – কোকোর ফ্ল্যাভোনয়েড মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অংশে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়। এই অংশটি দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমানো – দৈনন্দিন মানসিক চাপ মস্তিষ্কে ফ্রি র্যাডিক্যাল তৈরি করে, যা স্মৃতি দুর্বল করতে পারে। কোকোর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এসব ক্ষতিকর প্রভাব কমায়।
মনোযোগ ও শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি – নিয়মিত কোকো গ্রহণ মনোযোগ ধরে রাখতে ও নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে সব বয়স্করা (৫০-৬৯) তিন মাস ধরে প্রতিদিন উচ্চ ফ্ল্যাভানলযুক্ত কোকো দিয়ে তৈরি পানীয় পান করেছিলেন, তাঁদের স্মৃতিশক্তির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। মস্তিষ্কের স্ক্যানে দেখা গিয়েছে যে ডেন্টেট গাইরাস - একটি মেমোরি হাব - এমনভাবে কাজ করছে যেন এটি বয়স্ক নয়, বরং কম বয়সি কোনও মানুষের। স্মৃতি পরীক্ষার স্কোর 'সাধারণ ৬০ বছর বয়সি' স্তর থেকে ৩০-৪০ বছর বয়সিদের স্তরে নেমে এসেছে।
তবে বাজারচলতি চকোলেট খেলে এমনটা হবে না। বেশিরভাগ বাণিজ্যিক চকলেটে গবেষণায় ব্যবহৃত ৯০০ মিলিগ্রামের তুলনায় মাত্র ৪০ মিলিগ্রাম ফ্ল্যাভানল থাকে।
আপনি কেবল চকোলেট দিয়ে বার্ধক্যকে রোধ করতে পারবেন না। তার সঙ্গেই প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম এবং ফ্ল্যাভানল সমৃদ্ধ খাদ্য। স্মৃতিশক্তি দীর্ঘকাল ধরে সংরক্ষণ করতে এটি সাহায্য করতে পারে।
