আজকের দিনে রিল দেখা যেন দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। অফিসের কাজের ফাঁকে বা ঘুমানোর আগে মোবাইল হাতে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় রিল স্ক্রল করতে ভালোবাসে আট থেকে আশি। আর এই অভ্যাসই অজান্তে শরীরের বড় বিপদ ডেকে আনছে। বর্তমানে একাধিক শারীরিক ও মানসিক রোগের নেপথ্যে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার। বিশেষ করে বিছানায় শুয়ে রিল দেখা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শুয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিলে মগ্ন থাকলে কোন কোন সমস্যায় পড়তে পারেন, জেনে নিন-
• ঘাড় ও মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপঃ বিছানায় শুয়ে মোবাইল ব্যবহার করার সময় আমাদের ঘাড় এবং মেরুদণ্ডের অবস্থান অস্বাভাবিক হয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ এমনভাবে রিল দেখতে থাকলে মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে, ঘাড় শক্ত হয়ে যায়, এমনকী ‘টেক্সট নেক সিনড্রোম’ নামে পরিচিত ব্যথাজনিত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
• ঘুমের মান কমে যায়ঃ রিল দেখার সময় স্ক্রিন থেকে যে নীল আলো নির্গত হয়, তা শরীরে মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণে বাধা দেয়। এই হরমোনই ঘুম আনার জন্য দায়ী। ফলে রাতে ঘুম পেতে দেরি হয়, ঘুমের মান খারাপ হয় এবং সকালে ক্লান্তি নিয়ে ঘুম ভাঙে। নিয়মিত এমন হলে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
• চোখের উপর বিরূপ প্রভাবঃ দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ শুকিয়ে যায়, জ্বালা করে এবং মাথাব্যথা হয়। অনেক সময় ঝাপসা দেখাও শুরু হয়। রাতে বিছানায় শুয়ে রিল দেখা চোখের বিশ্রাম কেড়ে নেয়, যা পরবর্তীকালে চোখের পাওয়ার বাড়িয়ে দিতে পারে।
• মানসিক চাপ ও বিভ্রান্তিঃ বিশেষজ্ঞদের মতে, অবিরাম রিল স্ক্রল করার ফলে মস্তিষ্ক ক্রমাগত নতুন তথ্য প্রক্রিয়াজাত করতে থাকে। এতে মনোযোগ নষ্ট হয়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে এবং উদ্বেগ বা মানসিক চাপ বাড়ে। ঘুমের আগে এমন অতিরিক্ত উত্তেজনাপূর্ণ কনটেন্ট দেখা মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত সক্রিয় করে তোলে যা মানসিক শান্তি নষ্ট করে।
মনে রাখবেন, কয়েক মিনিটের বিনোদনের জন্য রিল দেখতে যতই ভাল লাগুক না কেন, বিছানায় শুয়ে মোবাইলে স্ক্রল করার এই অভ্যাস শরীরের ভেতর নীরবে তৈরি করছে নানা জটিল রোগের বীজ। যা নিয়ে সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে এর মাশুল দিতে হতে পারে নিজের স্বাস্থ্যের মাধ্যমে। চিকিৎসকদের মতে, ঘুমানোর অন্তত আধ ঘণ্টা আগে মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। সেক্ষেত্রে বসে বা সঠিক ভঙ্গিতে সীমিত সময় রিল দেখা তুলনামূলক নিরাপদ। দিনে নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিন রিল দেখার জন্য এবং চোখ ও মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিন। প্রয়োজনে রাতে বই পড়া, গান শোনা বা ধ্যান করার মতো অভ্যাস গড়ে তুলুন। তাহলেই অল্পবয়সে অনিদ্রার সমস্যায় ভুগবেন না।
