কথায় বলে, পেট ভাল থাকলে সব ভাল থাকে। পেটের সমস্যায় ভুগলে আরও অনেক শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। তালিকায় রয়েছে গ্যাস, অ্যাসিডিটি, অরুচি, ডায়ারিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য। সারা বছরই অনেকে অন্ত্রের সমস্যায় ভোগেন। ইদানীং অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, বাইরের খাবার খাওয়ার প্রতি ঝোঁক, শরীরচর্চার অভাব সহ আরও অনেক কারণে এই সমস্যা আরও বেড়েছে। পাকস্থলী, অন্ত্রে খাবার শোষিত হয়ে তা মলদ্বারের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে আসে। এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে না হলেই কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। যা থেকে শুরু হয় পেট ফাঁপা, গ্যাস, অম্বল সহ বিভিন্ন সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওষুধ খেয়ে সাময়িক স্বস্তি মিললেও দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ঘরোয়া প্রতিকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের রান্নাঘরে থাকা কিছু সাধারণ উপাদানই এই জটিল সমস্যাগুলোর কার্যকর সমাধান দিতে পারে।
*মৌরি: প্রাকৃতিকভাবে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে মৌরি। খাওয়ার পর অল্প মৌরি চিবোলে হজম ভাল হয় এবং অ্যাসিডিটি কমে।
* আদা: পাকস্থলীর পেশি শিথিল করে এবং অতিরিক্ত অম্ল নিচে নেমে যেতে সহায়তা করে আদা। চা-এর আকারে বা কাঁচা আদার ছোট টুকরো চিবোলে ভাল ফল মেলে।
আরও পড়ুনঃ মাছ-মাংস না খেয়েও তরতরিয়ে বাড়বে আয়রন! শুধু পাতে রাখুন এই ৭ খাবার
* কলা: কলা পেট ফাঁপা কমানোর জন্য অন্যতম উপকারী ফল। এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার ও পটাশিয়াম, যা শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং জল জমা প্রতিরোধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে দু'বার কলা খাওয়া মহিলাদের পেট ফাঁপার সমস্যা কমে। কলা অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।
*জোয়ানঃ হজমশক্তি বাড়ায় এবং গ্যাস কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর জোয়ান। সামান্য ভেজে খেলে বা গরম জলের সঙ্গে খেলে আরাম পাওয়া যায়।
*কিসমিস: কিসমিস রাতে জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে, পেট হালকা লাগে এবং হজমশক্তি বাড়ে।
*ফ্ল্যাকসিডঃ ফ্ল্যাক্স সিডে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ এবং এতে রয়েছে লিগন্যান। এগুলো অন্ত্রে প্রদাহ কমায়, হরমোনের ভারমাস্য বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, এই বীজ হরমোনের হেরফের সামাল দিতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য হোক বা কোলেস্টেরলের সমস্যা, ফ্ল্যাক্স সিড সব শারীরিক সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে।

*ওটস: নিয়মিত সকালের নাশতায় খেলে অন্ত্র পরিষ্কার থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি কমে।
*চিয়া বীজঃ স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন, অথচ চিয়া বীজের নাম শোনেননি, এমন মানুষ প্রায় নেই। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, আকারে ছোট হতে পারে কিন্তু এই বীজের গুণ অনেক। এই বীজে উপস্থিত দ্রবণীয় ফাইবার অন্ত্রে উপস্থিত ভাল ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে এবং মলত্যাগ সহজ করে। এই স্বাস্থ্যকর বীজে ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ভাল সমন্বয় রয়েছে। ফলে এতে পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকে ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মেলে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে ওষুধ ছাড়াই হজমের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে। তবে দীর্ঘদিন সমস্যা চলতে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
