রিয়া পাত্র
বুদ্ধদেবের প্রয়াণের এক মাসের মাথায় প্রয়াত তাঁরই বন্ধু-সহকর্মী সীতারাম। বুদ্ধদেবের শেষ যাত্রায় উপস্থিত থাকতে পারেননি, চোখের সমস্যার কারণে। আগস্টের ১৯ থেকে হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন। আশা ছিল, এই লড়াই জিতে ফিরেবেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে জানা গেল, প্রয়াত সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সংবাদ পৌঁছয় আলিমুদ্দিনে, বন্ধু বিয়োগে ভেঙে পড়েছেন বর্ষীয়ান বাম নেতা বিমান বসু।
বামেদের তরুণ প্রজন্ম, যাঁরা সীতারামের সংস্পর্শে এসেছেন কখনও, তাঁর থেকে রাজনীতির পাঠ নিয়েছেন, অভিভাবক বিয়োগে ভেঙে পড়েছেন তাঁরাও।
বাম নেতা সৃজন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘আমার এক নয়, একাধিক, বেশকিছু ব্যক্তিগত আলাপের স্মৃতি রয়েছে। গত কয়েকদিন তাঁর শারীরিক অসুস্থতার খবর জানার পর থেকেই আশঙ্কায় ছিলাম। তবু আশা ছিল। এই সংবাদের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমাদের প্রজন্মের জন্য, রাজনৈতিক অভিভাবক চলে গেলেন।‘
দীপ্সিতা ধর, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তাঁরা খাতায়-কলমে, ভোটে দীপ্সিতার হয়ে প্রচারেও এসেছিলেন সীতারাম। বলছেন, ‘ইউনিভার্সিটির প্রাক্তনী, চরম রস বোধ। মজা করে আমায় "ইয়ং লেডি" বলে সম্বোধন করতেন। বাংলা বলতে পারতেন ভালোই। শেষ দেখা আমার নির্বাচনি প্রচারে, বক্তৃতা থামিয়ে আমার আর সব্যসাচি দার সাথে ছবি তুলেছিলেন, যাতে আমরা আবার প্রচারে ফিরে যেতে পারি। তাঁর চলে যাওয়া আমার জন্য ব্যক্তিগত ক্ষতি।‘
প্রতীক উর রহমান বলছেন, ‘বেশকয়েকবার ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা হয়েছে। একটা মানুষের গোটা বিশ্ব সম্পর্কে, বিভিন্ন বিষয়ে এত জ্ঞান থাকতে পারে, এবং সেকথা এত সহজ-সরল ভাষায় বলা যায়, বোঝানো যায়, ওঁর সঙ্গে না মিশলে ভাবতেই পারতাম না আমি। আমি নিজে পলিটিক্যাল সায়েন্সের ছাত্র, রাজনীতির বহু জটিল বিষয় এত সহজাভবে উনি বুঝিয়েছেন, সেটা শেখার। সংসদীয় গণতন্ত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হারালাম আমরা। তিনি যখন সংসদে বলতেন, সকলে মন দিয়ে শুনতেন। এটাই সীতারাম ইয়েচুরি।‘
ভারতীয় রাজনীতির মানচিত্রে অন্যতম জনপ্রিয় এক নক্ষত্রের নাম সীতারাম ইয়েচুরি। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র সীতারামের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ছাত্র সংগঠন থেকেই। ১৯৭৪ সালে তিনি ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের সদস্য হিসাবে যোগ দেন। তারপর ছাত্র সংগঠনের কাল পেরিয়ে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-তে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। তিনি জেনএনইউ-এর ছাত্র সংসদের সভাপতি পদেও ছিলেন। তিনিই ১৯৭৮ সালে নির্বাচিত হন এসএফআই-এর সর্বভারতীয় যুগ্ম-সম্পাদক হিসাবে। তিনি পরে সভাপতি পদেও নির্বাচিত হন। কেরল ও বাংলার বাইরের কোনও এক নেতা সেই প্রথমবার এসএফআই-এর সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
