মেট্রোর কাজে বিলম্বে মূল সমস্যা জমিজট! বড় দাবি রেলমন্ত্রীর

ছবি: সংগৃহীত।

আবু হায়াত বিশ্বাস, দিল্লি: কলকাতা মেট্রোর প্রকল্পের কাজে সবচেয়ে বড় সমস্যা জমিজট। এমনটাই দাবি রেলমন্ত্রকের।

কলকাতা ও শহরতলীর মোট ৫২ কিলোমিটারের ৪টি মেট্রো করিডোর নির্মাণাধীন। যার মধ্যে ২০ কিলোমিটার জমি অধিগ্রহণ এবং রাজ্য সরকারের ‘ইউটিলিটি’ স্থানান্তর সংক্রান্ত সমস্যার কারণে আটকে আছে বলে দাবি  রেল মন্ত্রকের। কলকাতার ৪ টি মেট্রো প্রকল্পের কাজ কী কারণে বিলম্ব হচ্ছে, তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন রেলমন্ত্রী। বুধবার লোকসভার তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি ও শত্রুঘ্ন সিনহার প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত কলকাতা মেট্রোরেল ছিল ২৮ কিলোমিটার। আর গত ১১ বছরে হয়েছে ৪৫ কিলোমিটার। রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত তিন বছরে এবং বর্তমান আর্থিক বছরে মোট ৯৭ টি সমীক্ষা হয়েছে (‌‌১০ নতুন রেল লাইন, ৮৭ ডাবলিং)‌‌ এবং সম্পূর্ণ/আংশিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে, যার মোট দৈর্ঘ্য ৪,০০৪ কিলোমিটার। 


শত্রুঘ্ন সিনহার প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব লিখিতভাবে জানিয়েছেন, জোকা-এসপ্লানেড রেল প্রকল্পে জোকা-‌মাঝেরহাট ৭.‌৭৪ কিলোমিটার পথের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকি ৬.‌২৬ কিলোমিটারে ‌জমি অধিগ্রহণ এবং ‘ইউটিলিটি ডাইভারশন’ সমস্যাগুলির কারণে কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হয়েছে। একইভাবে নিউ গড়িয়া-‌দমদম বিমানবন্দর লাইনের বেলেঘাটা-‌দমদম বিমানবন্দরের ২২ কিলোমিটার লাইনের কাজ শ্লথ গতিতে চলছে। কারণ ট্রাফিক ডাইভারশনের সমস্যা। নোয়াপাড়া -‌বারাসাত লাইনে বিমানবন্দর থেকে মাইকেল নগর পর্যন্ত লাইনে জমিজটের কারণে কাজ থমকে আছে।

 বরানগর-‌ব্যারাকপুর (১২.৫ কিমি) রাজ্য সরকার কর্তৃক অ্যালাইনমেন্টে বিলম্বিত ইউটিলিটি (কলকাতা পৌর কর্পোরেশনের জল পাইপলাইন) স্থানান্তরের কারণে কাজ আটকে আছে।
এদিকে, দূর্গাপুজোর সময় ভারতীয় রেল বাংলার জন্য কতগুলি ট্রেন চালানো হয়েছিল— রেলমন্ত্রকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ মালা রায়। তাঁর প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, রেলওয়ে নেটওয়ার্ক সব রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত। দুর্গাপুজো, দীপাবলি এবং ছট ইত্যাদি উৎসবের সময় যাত্রীদের সুবিধার্থে ভারতীয় রেল ১ অক্টোবর ২০২৫ থেকে ৩০ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ১২,৩০০ টিরও বেশি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করেছে। যা আগের বছর গুলির তুলনায় অনেক বেশি। রেল মন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে ৭৯৯০ টি বিশেষ ট্রেন চালানো হয়েছিল।

কলকাতা মেট্রো  প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, বর্তমানে শহর কলকাতা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে মেট্রোর লাইন। তার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে নিরাপত্তাও। স্টেশনে থাকেন পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী, প্রতিনিয়ত চেক করা হয় ব্যাগ, থাকে মেটাল ডিটেক্টরও। তবে এবার মেট্রো রেলের নিরাপত্তা ও নজরদারি ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে ব্যবহৃত হতে চলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)। ভারতীয় রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে মেট্রো রেলও চালু করতে চলেছে এই আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক নজরদারি ব্যবস্থা। জানা গিয়েছে, এআই ভিত্তিক একটি সফটওয়্যার চালু করা হবে মেট্রোরেলে। 

এই সফটওয়্যার সন্দেহজনক মানুষ বা যানবাহনের গতিবিধি, অনধিকার প্রবেশ, অযথা ঘোরাফেরা এবং ক্যামেরা ট্যাম্পারিং সহজেই শনাক্ত করতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পড়ে যাওয়া ব্যক্তি খুঁজে বের করা, নির্দিষ্ট রং শনাক্ত করা এবং মানুষের বা যানবাহনের সাথে রঙের অনুসন্ধান করাও সম্ভব হবে। নতুন প্রযুক্তি চালু হলে মেট্রো রেলের নিরাপত্তা ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা আরও নির্ভুল ও আধুনিক হবে বলে আশাবাদী মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ।