আজকাল ওয়েবডেস্ক: শনিবার সকালে লিওনেল মেসির ‘জি.ও.এ.টি ট্যুর অফ ইন্ডিয়া ২০২৫’-এর কলকাতা পর্বটি বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অপেক্ষা করার পরেও মানুষের ভিড় মেসিকে ঘিরে থাকায় ভক্তরা আর্জেন্টিনার ফুটবল তারকাকে এক ঝলকও দেখতে পারেননি। যার ফলে স্টেডিয়ামে বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। যে অনুষ্ঠানটি দুই ঘণ্টাব্যাপী হওয়ার কথা ছিল এবং যেখানে মেসির অভিনেতা শাহরুখ খান, সৌরভ গাঙ্গুলি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানটি আধ ঘণ্টারও কম সময়ে শেষ হয়ে যায়। যা ভক্তদের হতাশ করে। এর পরেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় যুবভারতী।

কীভাবে পরিস্থিতি বিগড়ে গেল তুলে ধরা হল তার ধারাবিবরণী-

কলকাতায় মেসির পদার্পণ

ভারতীয় সময় মধ্যরাত আড়াইটের সময় ইন্টার মায়ামি দলের সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ এবং রড্রিগো পলকে নিয়ে কলকাতায় বিমানবন্দরে নামেন মেসি। উত্তেজনার পারদ তখন থেকেই চরমে উঠেছিল। তাঁকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন অগুণতি ভক্তরা।

৭০ ফুটের মূর্তি উন্মোচন

কর্মসূচিতে ছিল যে লেকটাউন ভিআইপি মোড়ের কাছে যে ৭০ ফুটের মূর্তি তৈরি করা হয়েছিল, সেটির উন্মোচন করবেন মেসি। সকাল ১০টা নাগাদ হায়াত রিজেন্সি হোটেলের ঘর থেকেই ভার্চুয়ালি সেই মূর্তির উন্মোচন করেন তিনি। লেকটাউনে যাননি। এর পরেই এর কিছুক্ষণ পরেই হোটেলেই শাহরুখ খান এবং মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস (এমবিএসজি)-এর মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সঙ্গে দেখা করেন এবং ছবি তোলেন মেসি।

লিওনেল মেসির সঙ্গে শাহরুখ খান। ছবি: এক্স।

যুবভারতীতে মেসি

সকাল সাড়ে ১১টা আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি, সুয়ারেজ ও ডি পলের সঙ্গে স্টেডিয়ামে পৌঁছন। হাজার হাজার ভক্ত সেখানে উপস্থিত ছিলেন শুধু তাঁকে এক ঝলক দেখবেন বলে। শাহরুখ, সৌরভ এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আগে তাঁর স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণ করার কথা ছিল। এরপরেই পরিস্থিতি বিগড়ে যেতে শুরু করে।

মেসিকে দেখতে না দর্শকদের তাণ্ডব, মাঠ ছাড়লেন তারকা

মাঠে পৌঁছতেই মেসিকে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদরা ঘিরে ধরেন। এর ফলে গ্যালারিতে থাকা দর্শকরা তাঁকে ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছিলেন না। এর ফলে ক্ষুব্ধ দর্শকরা কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে আওয়াজ দিতে থাকেন। মাঠের দিকে চেয়ার ও বোতল ছুঁড়ে নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকেন।

যুবভারতীতে মেসি। ছবি: এক্স।

বিশৃঙ্খলার মধ্যে মেসির স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণ সংক্ষিপ্ত করা হয় এবং নিরাপত্তা কর্মীরা তাঁকে স্টেডিয়াম থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। ৩৮ বছর বয়সী মহাতারকা মাত্র ২০ মিনিটের জন্য স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন। ১১টা ৫৩ মিনিটে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান তিনি।

ক্ষুব্ধ দর্শকরা মাঠে ঢুকে পড়লেন

গ্যালারির ফেন্সিং টপকে মাঠে ঢুকে পড়লেন অগুণতি দর্শক। ভাঙচুর করা হল ডাগ আউটে। শামিয়ানা উল্টে দেওয়া হয়। গ্যালারি থেকে চেয়ার এবং জলের বোতল ছুঁড়ে মারা হয়। গোলপোস্ট ভেঙে ফেলা হয়। ক্ষুব্ধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ব়্যাফ নামানো হয়। বেশ খানিকক্ষণ পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। স্টেডিয়ামের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন আগত দর্শকরা। তাঁরা একটাই দাবি ছিল, টাকা ফেরত চাই।

ক্ষমা চাইলেন মমতা

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সল্টলেক স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসির অনুষ্ঠানে ঘটে যাওয়া বিশৃঙ্খলার জন্য মেসি এবং কলকাতার তাঁর ভক্তদের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি জানান, এই অব্যবস্থাপনা দেখে তিনি হতবাক। এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনের করেছেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে ডিজি এবং এডিজি

যুবভারতীর পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন ডিজি রাজীব কুমার এবং এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম। দু’জনেই জানান, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আয়োজকদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে। আয়োজকদের লিখিত জানাতে হবে যে, টিকিটের মূল্য ফেরত দিতে হবে। নইলে আইনি ব্যবস্থা। 

শতদ্রু গ্রেপ্তার

ডিজি এবং এডিজি প্রথমে জানান মূল উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মেসির ভারত সফরের কী হবে?

শনিবার কলকাতা সফরের পরে মেসির তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডির সঙ্গে একটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে হায়দরাবাদে আসার কথা ছিল। কিন্তু সফরের মূল উদ্যোক্তা শতদ্রু গ্রেপ্তার হওয়ায়, হায়দরাবাদ সফর নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।