আজকাল ওয়েবডেস্ক: নড়াইলের লোহাগড়ায় স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ এনে ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ নিলেন এক স্ত্রী। রাতের ঘুমের মধ্যে স্বামীর উপর হামলা চালিয়ে তার পুরুষাঙ্গ কাটার চেষ্টা করেন রুমা বেগম (২৮) নামের ওই নারী। গুরুতর আহত অবস্থায় স্বামী বিল্লাল শেখ (৩৩) বর্তমানে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্ত্রীকে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে, লোহাগড়া উপজেলার লক্ষীপাশা ইউনিয়নের বয়রা পশ্চিমপাড়া গ্রামে। আহত ব্যক্তি বিল্লাল শেখ ওই এলাকার সোনা মিয়া শেখের ছেলে। অভিযুক্ত রুমা বেগমের বাড়ি পাশের দিঘলিয়া ইউনিয়নের সারোল গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক দশক আগে তাদের বিয়ে হয় এবং এক বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে দম্পতির। সম্প্রতি বিল্লাল শেখের বিরুদ্ধে পরকীয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। প্রতিবেশীরা জানান, স্ত্রী রুমা দীর্ঘদিন ধরেই স্বামীর প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং তিনি প্রায়ই স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হতেন।

আরও পড়ুন: সুরা প্রেমীদের মাথায় হাত! এবার থেকে মদ্যপানের মাত্রা ঠিক করে দেবে আদালত? জনস্বার্থ মামলার রায় দিল কোর্ট

শনিবার গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামীর উপর ধারালো বঁটি নিয়ে হামলা চালান রুমা বেগম। তার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলার চেষ্টা করেন তিনি। হঠাৎ জেগে ওঠা বিল্লাল বাধা দিতে গেলে তার হাতও জখম হয়। চিৎকার শুনে পরিবারের সদস্যরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতেল শয্যা থেকে বিল্লাল শেখ জানান, “রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি স্ত্রী বঁটি হাতে নিয়ে আক্রমণ করছে। আমি প্রতিরোধ করতে গেলে হাত কেটে যায়। ওর কোনও কারণ ছিল না, হঠাৎ করেই এমন কাণ্ড করেছে। আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।” তবে তিনি পরকীয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, “ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযুক্ত নারীকে আটক করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে ঘটনার তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এই ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অনেকে এটিকে দাম্পত্য কলহ ও মানসিক যন্ত্রণা থেকে জন্ম নেওয়া ‘প্রতিক্রিয়া’ বললেও, আইনের চোখে এটি একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হবে।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—সমাজে পরকীয়ার প্রবণতা কি দিন দিন বাড়ছে? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রযুক্তির প্রসার, সামাজিক মাধ্যমে অজস্র যোগাযোগের সুযোগ এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় এই প্রবণতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। আগের তুলনায় বিবাহিত জীবনে ধৈর্য ও পারস্পরিক সম্মান কমে গেছে। মানুষ ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে অনেক সময় পারিবারিক দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতিকে উপেক্ষা করছে। কর্মব্যস্ততা, মানসিক চাপ এবং দাম্পত্য জীবনে একঘেয়েমি থেকেও কেউ কেউ পরকীয়ার দিকে ঝুঁকছে। আবার, অনেক ক্ষেত্রেই নারী বা পুরুষ পরস্পরের প্রতি সময় দিতে না পারায় সম্পর্ক ভেঙে পড়ছে। সমাজে এই প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলেছে বলে মত সমাজবিদদের। ফলে, পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে—এই ঘটনাই তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এখনই পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনার সুযোগ ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানো সময়ের দাবি।