আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইরানের অন্যতম শক্তিশালী ও ভীতিপ্রদ প্রতিষ্ঠান ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC) দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং বিদেশে ক্ষমতা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর গঠিত এই বাহিনী সরাসরি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অধীনে কাজ করে এবং নিয়মিত সেনাবাহিনীর বাইরে একটি বিকল্প শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

আইআরজিসি বর্তমানে প্রায় ১.৯ লাখ সদস্যের বিশাল বাহিনী, যার অর্ধেকই বাধ্যতামূলক সামরিক নিয়োগে রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে: স্থলবাহিনী (৩১টি প্রদেশ জুড়ে মোতায়েন), বাসিজ (৬ লাখ স্বেচ্ছাসেবক), স্বতন্ত্র নৌবাহিনী (হরমুজ প্রণালীসহ উপকূল রক্ষা), বেলিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরিচালনাকারী বিমানবাহিনী, এবং সাইবার কমান্ড, যা গোয়েন্দা তৎপরতা ও প্রপাগান্ডা যুদ্ধে সক্রিয়।

ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC), ফারসিতে যাকে বলা হয় 'সেপাহ-এ পাশদারানে ইনকিলাব-এ ইসলামি' (ইসলামি বিপ্লবের অভিভাবক বাহিনী), এবং সাধারণভাবে ‘পাসদারান’ নামেও পরিচিত, এটি প্রতিষ্ঠা করেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনি ১৯৭৯ সালের ২২ এপ্রিল, ইসলামি বিপ্লব এবং শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পতনের পর।

বিপ্লবের পরবর্তী সময় থেকেই আইআরজিসি একটি "জনগণের বাহিনী" হিসেবে ভাবা হয়, যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইসলামিক শাসনব্যবস্থার রক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ অভ্যুত্থান প্রতিরোধ, বিশেষ করে ১৯৫৩ সালের মহম্মদ মোসাদ্দেকের পতনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো।

সাম্প্রতিক সময়ে ইজরায়েলের সঙ্গে তীব্র সামরিক সংঘাতে আইআরজিসি আবারও আলোচনায়। ইজরায়েল জুন ২০২৫-এ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় পাল্টা হামলা চালায়, যাতে আইআরজিসি প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামিসহ একাধিক ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানান, হামলার লক্ষ্য ছিল “ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির ধ্বংস।”

IRGC-এর কুদস ফোর্স মধ্যপ্রাচ্যে হামাস ও হেজবোল্লাহর মতো মিত্রদের সহযোগিতা করে। এসব সংগঠনের সঙ্গে ইজরায়েল বর্তমানে গাজা ও লেবাননে সংঘাতে জড়িত। রাজনীতিতেও আইআরজিসি-র ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বহু প্রাক্তন সেনা সদস্য সংসদ, মন্ত্রিসভা ও প্রাদেশিক প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তারা অবৈধ আর্থিক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে শত শত কোটি ডলার আয় করেছে।

বহু বিশ্লেষকের মতে, বার্ধক্যে উপনীত খামেনির উত্তরসূরি নির্ধারণেও আইআরজিসি মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। ফলে আরও ক্ষমতাকেন্দ্রীকরণ এবং রাজনৈতিক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে।