আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তাঁর মতে, শুধু ভারত–পাকিস্তানই নয়, যেসব অঞ্চলে আন্তর্জাতিক অস্থিরতা বিদ্যমান, সেসব ক্ষেত্রেও ওয়াশিংটন সমানভাবে সজাগ রয়েছে। রবিবার এনবিসি নিউজের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান “মিট দ্য প্রেস”-এ রুবিও বলেন, “প্রতিদিন আমরা লক্ষ্য রাখি পাকিস্তান ও ভারতে কী ঘটছে, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে কী ঘটছে। এসব জায়গা ছাড়াও অন্যত্র যেখানে উত্তেজনা আছে, সেগুলোকেও আমরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করি।”

যুদ্ধবিরতি নিয়ে রুবিওর মন্তব্য

রুবিও জানান, চলমান সংঘর্ষে যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিক আহ্বান জানালেও বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। “যুদ্ধবিরতির জন্য দুই পক্ষকেই একসঙ্গে অস্ত্র নামাতে হবে। কিন্তু রাশিয়া এখনও তাতে সম্মত হয়নি,” তিনি বলেন। তাঁর মতে, দীর্ঘ সময়ের যুদ্ধের পর যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়। “তিন-সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধের পর যুদ্ধবিরতি খুব দ্রুত ভেঙে যেতে পারে,” উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, প্রকৃত লক্ষ্য হওয়া উচিত কেবল অস্থায়ী বিরতি নয়, বরং একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি—যেটি ভবিষ্যতেও সংঘাত প্রতিরোধ করবে।

আরও পড়ুন: ট্রাম্প–পুতিন আলাস্কা বৈঠক: ভারতের সামনে শ্বাসরুদ্ধকর কূটনৈতিক সমীকরণ

ট্রাম্পের দাবি ও ভারতের কড়া প্রতিক্রিয়া

প্রসঙ্গত, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুবার দাবি করেছেন যে, তাঁর হস্তক্ষেপেই ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনা হ্রাস পায়, বিশেষ করে অপারেশন সিঁদুর এবং পহেলগাওঁ সন্ত্রাসী হামলার পর। ট্রাম্পের কথায়, তাঁর উদ্যোগেই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল।
তবে নয়াদিল্লি এ দাবি বারবার নাকচ করেছে। ভারতীয় সরকারের অবস্থান— পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ও সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে দ্বিপাক্ষিক বিষয়, তৃতীয় কোনো দেশের মধ্যস্থতার সুযোগ নেই।

সংসদে মোদি ও জয়শঙ্করের বক্তব্য

অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গে সংসদে বিশেষ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই জানিয়েছিলাম আমাদের পদক্ষেপ অ-উত্তেজনামূলক। বিশ্বে কোনো নেতা আমাদের বলেছিলেন থামতে—এমন কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।” পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করও ট্রাম্পের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেন, যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ। তিনি আরও জানান, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আলোচনার কোনো সম্পর্ক নেই।

ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক

রুবিওর এই মন্তব্য আসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাম্প্রতিক আলাস্কা বৈঠকের পর। তিন ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠক ছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার ইউক্রেন আক্রমণের পর প্রথম মার্কিন–রাশিয়া শীর্ষ বৈঠক। বৈঠকে ট্রাম্প জানান, তিনি ও পুতিন একমত হয়েছেন যে, শান্তি প্রক্রিয়া যুদ্ধবিরতি ছাড়াই এগোতে পারে। এই অবস্থান ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্ররা সমর্থন করছে। এভাবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নতুন করে আলোচনায় এসেছে, বিশেষত ভারত–পাকিস্তান প্রসঙ্গ ঘিরে। তবে ভারত সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে, তাদের সীমান্ত ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে কোনো বাইরের দেশের ভূমিকা নেই।