আজকাল ওয়েবডেস্ক: অনলাইনে শিশু যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান ডিয়েগোর ভারতীয় বংশোদ্ভূত অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর নিসর্গ শাহ। গত শনিবার, ২ আগস্ট, সান ডিয়েগোর হিলক্রেস্ট এলাকার প্যাভিলিয়ন্স গ্রোসারি স্টোরের ভিতরে এক ‘ভিজিলান্তে’ বা স্বঘোষিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের গোষ্ঠী “People v Preds” তাঁকে জনসমক্ষে অভিযুক্ত করে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, শাহ-কে এক ১৪ বছর বয়সী বালকের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে দেখা করার চেষ্টার অভিযোগে প্রকাশ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ভিডিও অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তি অ্যাপ-ভিত্তিক ডেটিং প্ল্যাটফর্ম Grindr-এ নিজের পরিচয় গোপন রেখে কথোপকথন করেন এবং নিজের বয়স ২৮ বছর বলে দাবি করেন। অভিযোগ, তিনি ওই নাবালকের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় যৌন সঞ্চালনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান — পার্সোনাল লুব্রিক্যান্ট ও ডুশ — সঙ্গে নিয়ে যান। অ্যাক্টিভিস্ট টিম জনসন, যিনি এ পর্যন্ত ৫০০-র বেশি ‘সন্দেহভাজন শিশু নিপীড়ক’-কে চিহ্নিত করার দাবি করেছেন, শাহকে প্রকাশ্যে সম্মুখীন করেন এবং তাঁর কথোপকথনের স্ক্রিনশট সামনে আনেন। ভিডিওতে শাহ বারংবার দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়। “আমি নিজেকে ঘৃণা করছি, জীবনে এত খারাপ কখনও লাগেনি,” তিনি বলেন। এমনকি তিনি বলেন, “আমার হয়তো কাউন্সেলিং দরকার।”
ঘটনার সময় সান ডিয়েগো পুলিশ বিভাগের দুটি টহল গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও শাহকে সেসময় গ্রেপ্তার করেনি। তবে তাঁর ফোন জব্দ করা হয় এবং তথ্যপ্রমাণ ইন্টারনেট ক্রাইমস এগেইনস্ট চিলড্রেন (ICAC) টাস্ক ফোর্সে হস্তান্তর করা হয়। সান ডিয়েগো পুলিশ বিভাগের লেফটেন্যান্ট ট্র্যাভিস ইস্টার জানান, “আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এবং আমাদের ICAC ইউনিট সক্রিয়ভাবে তদন্ত চালাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা রুজু হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “সাধারণ নাগরিকদের দ্বারা পরিচালিত এমন ভিজিলান্তে অভিযানকে আমরা সমর্থন করি না, কারণ এই ধরনের তদন্ত পরিচালনার জন্য বিশেষ আইনি প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ ছাড়া এমন কার্যকলাপ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।” একটি ছবিতে শাহকে হ্যান্ডকাফ পরানো অবস্থায় দেখা গেলেও, পরে জানা যায়, তাঁকে ঘটনাস্থল থেকেই মুক্তি দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, “আমরা নিসর্গ জে শাহের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে অবগত। তদন্ত চলাকালীন আমরা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করব। আমাদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা এবং যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হয়।” আরও বলা হয়, “যৌন হয়রানি ও যৌন হিংসার সব অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। কেউ এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলে UC San Diego-এর Office for the Prevention of Harassment and Discrimination-এ যোগাযোগ করতে পারেন।”
অন্যদিকে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শাহ বলেন, “এই অভিযোগগুলি ভুল। আমি নিজে বলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু আমার আইনজীবী এখন আমাকে কিছু বলতে নিষেধ করেছেন। তবে তিনিই আপনার সঙ্গে কথা বলবেন।” নিসর্গ জে শাহ UC San Diego-এর চেমিক্যাল ও ন্যানো ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর। বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইট অনুযায়ী, তিনি MIT থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি করেছেন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক্টরাল ফেলো ছিলেন। তাঁর গবেষণা ক্ষেত্র—ইমিউনোইঞ্জিনিয়ারিং ও ন্যানোস্কেল উপাদান উন্নয়ন।
তিনি Johns Hopkins University-তে স্নাতক পড়াশোনা করেন এবং ক্যানসার থেরাপির জন্য ন্যানোপার্টিকল ডেলিভারি সিস্টেম নিয়ে গবেষণা করেন।
প্রসঙ্গত, এই ঘটনার মাত্র একমাস আগে, আরেক ভারতীয় বংশোদ্ভূত — ৩৪ বছর বয়সী ফ্লোরিডার ডেল্টা এয়ারলাইন্স পাইলট রুস্তম ভাগওয়াগর — সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি বিমানের ভিতর থেকে গ্রেপ্তার হন শিশু যৌন অপরাধের অভিযোগে। তিনি বিমানের সহ-পাইলট ছিলেন। নিসর্গ শাহের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও, এই ঘটনা একদিকে যেমন অনলাইন ভিজিলান্তে সংস্কৃতির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, অন্যদিকে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার পরিসরে সুশীল সমাজের নৈতিক কাঠামো নিয়ে এক গম্ভীর বিতর্কও উত্থাপন করে।
