আজকাল ওয়েবডেস্ক: পৃথিবী থেকে প্রায় ৭৩ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি দ্বৈত নক্ষত্র ব্যবস্থা TOI-2267-এ বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন দুটি নিশ্চিত পৃথিবী-আকারের গ্রহ এবং তৃতীয় একটি সম্ভাব্য গ্রহ। এই আবিষ্কার শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানের নতুন দিগন্তই উন্মোচন করেনি, বরং দ্বৈত নক্ষত্রের চারপাশে গ্রহ গঠনের ধারণাকেও নতুনভাবে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।
গবেষণা দলটি স্পেস টেলিস্কোপ এবং বিশ্বব্যাপী স্থলভিত্তিক ছোট ছোট টেলিস্কোপের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেটা সংগ্রহ করেছে। লিয়েজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবাস্তিয়ান জুন্নিগা-ফার্নান্দেজ নেতৃত্বাধীন এই দলটি বলছে, TOI-2267 একটি অত্যন্ত বিরল সিস্টেম, যেখানে দুটি পৃথক নক্ষত্রের চারপাশে একাধিক গ্রহ ঘুরছে।
TOI-2267 হল একটি কমপ্যাক্ট বাইনারি সিস্টেম, অর্থাৎ দুটি নক্ষত্র অত্যন্ত ঘন কক্ষপথে একে অপরকে প্রদক্ষিণ করছে। এই ঘনত্বের কারণে নক্ষত্র দুটির মধ্যে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ অত্যন্ত শক্তিশালী, যা সাধারণত গ্রহের জন্ম ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার পথে বড় বাধা সৃষ্টি করে।
দুটি নক্ষত্রই M শ্রেণির বামন এরা ছোট, ঠান্ডা, কম ভরবিশিষ্ট লাল তারা। এই ধরনের তারার আলো ক্ষীণ হওয়ায়, যখন কোনো গ্রহ তার সামনে দিয়ে যায়, তখন তার আলোর বড় অংশ ঢেকে যায় ফলে ট্রানজিট পদ্ধতিতে গ্রহ শনাক্ত করা সহজ হয়।
আরও পড়ুন: দূষণের গ্রাসে দিল্লি, সামনে এল নতুন ভাইরাসের কীর্তি
দুটি নিশ্চিত গ্রহের আকার পৃথিবীর কাছাকাছি। একটির কক্ষপথ পূর্ণ হতে ২.২৮ দিন, আর অন্যটির ৩.৪৯ দিন সময় লাগে। অর্থাৎ তারা তাদের নক্ষত্রকে অত্যন্ত কাছ থেকে এবং দ্রুত গতিতে প্রদক্ষিণ করছে।
তৃতীয় সম্ভাব্য প্রার্থীর কক্ষপথ ২.০৩ দিনে সম্পূর্ণ হয়, তবে এটি নিশ্চিত করতে বিজ্ঞানীদের আরও একটি পরিষ্কার পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। দলটি নক্ষত্রের যুগল আলোর প্রভাব সংশোধন করে গ্রহগুলির আকারের সঠিক পরিমাপ নিশ্চিত করেছে।
দুটি নক্ষত্রের মধ্যবর্তী দূরত্ব মাত্র ৮ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক একক বা প্রায় ৭৪৪ মিলিয়ন মাইল। এত কাছের নক্ষত্রজুটি সাধারণত তীব্র জোয়ারীয় প্রভাব সৃষ্টি করে, যা নবীন গ্রহের উপাদান-সমৃদ্ধ ডিস্ককে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। ফলে এমন সিস্টেমে গ্রহ গঠনের সম্ভাবনা খুবই কম।
তবুও TOI-2267 ব্যতিক্রম। গবেষকরা বলছেন, এই তিনটি গ্রহ একই তারাকে প্রদক্ষিণ করতে পারবে না, কারণ তাহলে সিস্টেমটি স্থিতিশীল থাকবে না। তাঁদের বিশ্লেষণ অনুসারে, দুটি গ্রহ একটি তারাকে প্রদক্ষিণ করছে, আর তৃতীয়টি অপর তারার চারপাশে ঘুরছে।
দুটি নিশ্চিত গ্রহের কক্ষপথের অনুপাত প্রায় ৩:২, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানে “মিন মোশন রেজোন্যান্স” নামে পরিচিত। এমন অনুপাতে কক্ষপথে থাকা গ্রহগুলির মধ্যে মহাকর্ষীয় সম্পর্ক থাকে, যা সূক্ষ্ম সময় পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এই পরিবর্তন ধরতে বড় ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টেলিস্কোপের প্রয়োজন।
সম্ভাব্য তৃতীয় গ্রহটির কক্ষপথ অভ্যন্তরীণ গ্রহের তুলনায় অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়ায়, উভয়ই যদি একই তারাকে প্রদক্ষিণ করত, তবে সংঘর্ষের ঝুঁকি থাকত। সিমুলেশন অনুযায়ী, তৃতীয় গ্রহটি যদি বাইরের গ্রহের তারার চারপাশে ঘোরে, তবে সিস্টেমটি স্থিতিশীল থাকে।
গবেষকদের মতে, নক্ষত্রদ্বয়ের আলোতে ঘন ঘন ফ্লেয়ার ও স্পট কার্যকলাপ দেখা গেছে, যা গ্রহের ট্রানজিট সিগন্যালের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। তাই আরও উচ্চ-নির্ভুলতা সময়ক্রম বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
যদি তৃতীয় প্রার্থীটিও নিশ্চিত হয়, তাহলে এটি হবে এমন একটি ঐতিহাসিক সিস্টেম, যেখানে দুটি পৃথক তারার চারপাশে ট্রানজিটিং গ্রহ ঘুরছে — মহাবিশ্বে দ্বৈত সূর্যের নিচে গ্রহজন্মের রহস্য উন্মোচনের এক বিরল সুযোগ।
