আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রয়াগরাজের সঙ্গমে যেমন গঙ্গা, যমুনা ও পৌরাণিক সরস্বতী মিলিত হয়ে একাকার হয়ে যায়, পৃথিবীর কিছু জায়গায় আছে একেবারেই ভিন্ন দৃশ্য। সেখানে দেখা যায় দুই প্রবল জলরাশি পাশাপাশি এসে দাঁড়ায়, অথচ একে অপরের সঙ্গে সহজে মিশে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গালফ অব আলাস্কার কাছাকাছি এক বিস্ময়কর প্রাকৃতিক ঘটনা। প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর একে অপরের সঙ্গে মিলিত হলেও একেবারে আলাদা রেখার মতো ভিন্ন ভিন্নভাবে দেখা যায়। একপাশের জল গভীর নীল, অন্যপাশের জল হালকা বা কাদামাটির মতো ঘোলা। যেন প্রকৃতি নিজ হাতে দুটি সাম্রাজ্যের মধ্যে সীমানা এঁকে দিয়েছে।
ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, একটি নল দিয়ে সেই মিলনস্থল থেকে জল টানা হচ্ছে। নলের ভেতরে একদিকে কাদামাটি মিশ্রিত জল, অন্যদিকে স্বচ্ছ নীল জল— দুটোই আলাদা আলাদা প্রবাহিত হচ্ছে, যেন একে অপরকে ছোঁয়াও দিচ্ছে না।
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" target="_blank" rel="noopener">A post shared by Mind Core Science (@mindcorescience)
আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের বৈশিষ্ট্যে রয়েছে বিশাল পার্থক্য। আটলান্টিক মহাসাগরে লবণের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। ভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততা থাকলে জল সহজে একত্রে মিশে না। যেমন তেল আর জল— দুটোই তরল হলেও একে অপরের সঙ্গে মিশে না। ঠিক তেমনই দুই মহাসাগরের জলে ঘনত্বের পার্থক্য থাকায় তারা একে অপরকে প্রতিহত করে। দুই মহাসাগরের স্রোত আলাদা পথে ও গতিতে প্রবাহিত হয়। ফলে যখন তারা মুখোমুখি হয়, তখন মিশে যাওয়ার বদলে পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এর ফলে তৈরি হয় এক অদৃশ্য সীমানা, যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন হ্যালোক্লাইন। এখানেই দুটি মহাসাগরের জল সহজে মিশতে চায় না।
দুটি জলরাশির রঙের তারতম্যও প্রকট। এর পেছনে মূল কারণ হল পলি বা সেডিমেন্ট। কোনও কোনও জল অনেক বেশি পলি, বালি বা ক্ষুদ্র কণিকা বহন করে আনে, যা জলের রঙকে হালকা বা ঘোলাটে করে তোলে। অপরদিকে, সেডিমেন্ট কম থাকলে জল গাঢ় নীল দেখায়। আলাস্কায় গলিত হিমবাহের জল বিশাল পরিমাণ পলি বহন করে এনে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীর নীল জলের সঙ্গে মিশে যায়, আর সেখানেই স্পষ্ট ধূসর-নীল বিভাজন চোখে পড়ে।
যদিও প্রথম দেখায় মনে হয় যে দুটি মহাসাগর কখনোই মিশছে না, বাস্তবে তারা আস্তে আস্তে মিশে যায়। ঢেউ, বাতাস ও সমুদ্রের প্রাকৃতিক অস্থিরতা ধীরে ধীরে সেই সীমারেখাকে ভেঙে দেয়। তবে প্রথম দেখায় যে সীমানাটি চোখে পড়ে, সেটাই প্রকৃতির অদ্ভুত মায়া।
আটলান্টিক মহাসাগর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিমে এবং ইউরোপ-আফ্রিকার পূর্বে বিস্তৃত। অপরদিকে প্রশান্ত মহাসাগর এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমে এবং আমেরিকার পূর্বে বিস্তৃত। এই বিশাল জলরাশির মিলনস্থল আলাস্কা অঞ্চলে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির এই আশ্চর্য খেলা প্রত্যক্ষ করা যায়।
দুটি মহাসাগরের জলরাশির এমন স্পষ্ট ভিন্নতা মানুষকে বিস্ময়ে ভরিয়ে দেয়। আসলে এটি কোনও প্রকৃত দেয়াল নয়, বরং প্রকৃতির তৈরি অদৃশ্য সীমানা। আলাদা ঘনত্ব, লবণাক্ততা, স্রোত ও পলির প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া এই সীমারেখা আমাদের শেখায়— একই পৃথিবীতে থেকেও বৈচিত্র্যের জাদু কতটা অসাধারণ হতে পারে।