আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহু দশক ধরে একটি প্রধান বিনিয়োগকেন্দ্র। ২০২৪ সালে স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (FDI) ক্ষেত্রে জাপান শীর্ষস্থান অধিকার করেছে, যুক্তরাজ্য ও কানাডাকে পিছনে ফেলে। ওই বছর জাপানের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৭৫৪.০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা এককভাবে সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগ অবস্থান।


২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক বিনিয়োগকারী শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে প্রথম সাতটি দেশের বিস্তারিত চিত্র নিচে দেওয়া হল—


জাপান 
জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরেই শক্তিশালী বিনিয়োগকারী। ২০২৪ সালে দেশটি তালিকার শীর্ষে উঠে আসে। জাপানের এমন বিশাল FDI মূলত গাড়ি শিল্প, প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স, ম্যানুফ্যাকচারিং এবং বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানির সম্প্রসারণের ফলে তৈরি হয়েছে। টয়োটা, হোন্ডা, মিতসুবিশি—এই সব ব্র্যান্ডের মার্কিন বাজারে গভীর উপস্থিতি জাপানের বিনিয়োগকে আরও শক্তিশালী করেছে।


যুক্তরাজ্য 
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যার বিনিয়োগও জাপানের খুব কাছাকাছি। দুই দেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ফাইন্যান্স, রিয়েল এস্টেট, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, বীমা ও বহুজাতিক কর্পোরেট সংস্থার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিস্তারের ফলে এই বিনিয়োগ প্রবাহ শক্তিশালী থাকে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মাঝেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–যুক্তরাজ্য ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থিতিশীল থেকেছে।


কানাডা 
ভৌগোলিক নৈকট্য এবং সমন্বিত বাণিজ্য সম্পর্ক কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ অংশীদারদের মধ্যে একটির অবস্থানে রাখে। ১৯৯৪ সালের NAFTA থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক USMCA পর্যন্ত, দুই দেশের গভীর অর্থনৈতিক সংযোগ বিনিয়োগকে ধারাবাহিকভাবে বাড়িয়েছে। জ্বালানি, উৎপাদন, খনিজ, আর্থিক খাত এবং ফুড প্রোসেসিং—কানাডিয়ান কোম্পানিগুলো এসব খাতে শক্তিশালী প্রভাব রেখেছে।


নেদারল্যান্ডস 
চতুর্থ স্থানে থাকা নেদারল্যান্ডস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপ্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যাল, কৃষি ও লজিস্টিক খাতে বড় ভূমিকা রাখে। ডাচ কোম্পানিগুলোর ব্যবসাবান্ধব নীতি, করসুবিধা এবং সহজ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এই বিনিয়োগ প্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করেছে। ফিলিপস, ইউনিলিভার, র্যালেন্স ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মার্কিন বাজারে প্রবল উপস্থিতি FDI-কে শক্তিশালী করে।


জার্মানি 
জার্মানির বিনিয়োগ প্রধানত গাড়ি শিল্প, প্রকৌশল, যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক এবং শিল্প উৎপাদন খাতে কেন্দ্রীভূত।বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ-বেঞ্জ, সিমেন্স—এই কোম্পানিগুলো মার্কিন কর্মসংস্থানে বড় অবদান রাখে। জার্মান-আমেরিকান শিল্প সহযোগিতা প্রযুক্তি উদ্ভাবনেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।


সুইজারল্যান্ড 
সুইজারল্যান্ডের বিনিয়োগের মূল ক্ষেত্র হল ব্যাংকিং, ফার্মাসিউটিক্যাল, বায়োটেক এবং উচ্চমানের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি। নোভার্টিস, নেসলে, রশ—এই সুইস কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিশাল অবদান রাখে। এই কারণে দেশটি দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত।


আয়ারল্যান্ড 
টেক, ফার্মা এবং আর্থিক সেবা আয়ারল্যান্ডের বিনিয়োগের মূল ভরসা। অনুকূল করনীতি এবং মার্কিন–আইরিশ ব্যবসায়িক সম্পর্ক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বড় অপারেশন চালাতে উৎসাহিত করেছে। গুগল, মেটা, অ্যাপলের মতো কোম্পানির ইউরোপীয় হাব আয়ারল্যান্ডে হওয়ায় বিনিয়োগ প্রবাহ আরও শক্তিশালী হয়েছে।


২০২৪ সালের এই তালিকা দেখায় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও বিশ্বের বিনিয়োগের কেন্দ্রে রয়েছে। উন্নত অর্থনীতি, স্থিতিশীল ব্যবসা পরিবেশ এবং বিশ্ববাজারে শক্তিশালী উপস্থিতি দেশের FDI প্রবাহকে আরও বহুগুণ বাড়াচ্ছে।