আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিখ্যাত ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং একসময় পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এক ভয়াবহ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন—যে মানুষই একদিন নিজ হাতে এই গ্রহকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। তাঁর সেই আশঙ্কাজনক ভবিষ্যদ্বাণী আজ বাস্তবে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। তিনি সতর্ক করেছিলেন, অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং শক্তি খরচের লাগামছাড়া বৃদ্ধির ফলে পৃথিবী একসময় “আগুনের বল”-এ পরিণত হবে।
২০১৭ সালে চীনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হকিং বলেন, “বর্তমান বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির হার যে হারে বাড়ছে, তা আগামী সহস্রাব্দ পর্যন্ত টিকে থাকা অসম্ভব। এই বৃদ্ধি যদি একই গতিতে চলতে থাকে, তবে মানবজাতি নিজের অস্তিত্ব বিপন্ন করে ফেলবে।” তিনি পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, “২৬০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা এত বেড়ে যাবে যে মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে, আর বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ এত বেড়ে যাবে যে পৃথিবী লাল গরম হয়ে উঠবে। এই পরিস্থিতি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”
হকিং আরও বলেন, নিয়ন্ত্রণহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি মানবসভ্যতার জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে। তাঁর মতে, যদি মানুষ নিজেদের প্রজননের হার নিয়ন্ত্রণে না রাখে, তবে অবশেষে একটি বৃহৎ বিপর্যয়—যেমন পারমাণবিক যুদ্ধ—মানবসভ্যতাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।
হকিং শুধু জনসংখ্যা ও শক্তি ব্যবহারের কথা বলেননি, তিনি আরও কিছু সম্ভাব্য বিপদের কথাও উল্লেখ করেছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে মহামারি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান এবং এমনকি বহির্জাগতিক প্রাণীদের আক্রমণের সম্ভাবনা।
আরও পড়ুন: ধনতেরাসের আগে সোনা কেনা উচিত? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি হকিংয়ের আশঙ্কাকেই আরও বাস্তব করে তুলেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে পারমাণবিক সংঘাতের সম্ভাবনা এখন আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি। রাশিয়ার পক্ষ থেকেও প্রকাশ্যে বলা হয়েছে যে পরমাণু হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। একই সঙ্গে, ইজরায়েল, হামাস ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে, যা বিশ্ব রাজনীতিতে আরও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে।
হকিং দীর্ঘদিন ধরেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সতর্ক করে আসছিলেন। তাঁর আশঙ্কা ছিল, যদি মানুষ AI-কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়, তবে সেটি মানবজাতির অস্তিত্বকেই বিপদের মুখে ফেলতে পারে। বর্তমান যুগে “Artificial Generative Intelligence (AGI)” বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেখা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন AI-এর উত্থান সেই আশঙ্কাকেই আরও ঘনীভূত করছে। বহু বিশেষজ্ঞ ইতিমধ্যেই বলছেন, এই প্রযুক্তি একসময় মানুষের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হয়ে উঠতে পারে—এবং সেটিই হবে মানব সভ্যতার শেষ অধ্যায়।
কিছু প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের একাধিক বিলিয়নিয়ার নাকি “ডুমসডে বাঙ্কার” তৈরি করছেন, যেখানে তাঁরা AI-জনিত বৈশ্বিক বিপর্যয়ের সময় আশ্রয় নিতে পারবেন।
এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন, গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধি ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা লাগাতার বাড়ছে। বরফ গলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। এই অবস্থায় হকিংয়ের “আগুনের বল” তত্ত্বটি ক্রমেই বেশি বাস্তব মনে হচ্ছে।
স্টিফেন হকিংয়ের সেই সতর্কবার্তা আজও কানে বাজে — “আমরা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের কারণ হতে পারি।” বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, মানবজাতি হয়তো সত্যিই সেই পথে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
