আজকাল ওয়েবডেস্ক: দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনা—বিশেষত "অপারেশন সিঁদুর"এর পর এবং সিন্ধু জল চুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থানের পরে—এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে উপমহাদেশের বাম রাজনীতির অভ্যন্তরে।

পাকিস্তানের মজদুর কিসান পার্টির সাধারণ সম্পাদক ড. তৈমুর রহমান এক খোলা বিবৃতিতে ভারতের সিপিআই এবং সিপিএম-এর সাম্প্রতিক বিবৃতির কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, "এই বিবৃতি কেবল নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করেছে, কিন্তু এটি আন্তর্জাতিকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে উপেক্ষা করেছে।"

তিনি আরও বলেন, "যদি ভারত সরকার সিন্ধু জল চুক্তি ভেঙে চেনাব নদীর জল বন্ধ করে দেয়, তাহলে তা কি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই, না কি এক নিছক প্রতিশোধমূলক সাম্রাজ্যবাদী পদক্ষেপ?"

বিবৃতিতে দুই দেশের ডানপন্থী রাষ্ট্রব্যবস্থার ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের সমালোচনা করে বলা হয়, এই সংঘাত প্রকৃতপক্ষে দুইটি দক্ষিণ এশীয় শাসক শ্রেণির মধ্যে শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রামকে স্তব্ধ করে রাখার জন্য ব্যবহৃত এক পুরনো অস্ত্র।

ভারতের বাম দলগুলো—বিশেষ করে সিপিআই ও সিপিএম—তাদের বিবৃতিতে কাশ্মীরের উপর হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারতের "নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ" কে স্বীকৃতি দিয়েছে। যদিও তারা যুদ্ধবিরোধী অবস্থানে রয়েছে, তবু পাকিস্তানি বামদের মতে, তারা দ্ব্যর্থহীনভাবে ভারতের রাষ্ট্রীয় বয়ানের ছায়ায় চলে গেছে। বামপন্থী আন্তর্জাতিকতাবাদ যেখানে জাতি-রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে শ্রমিক শ্রেণির সংহতির কথা বলে, সেখানে এই ধরনের অবস্থান অনেকের চোখে আপসকামী।

এই বিতর্ক নতুন নয়। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময়েও আন্তর্জাতিক বাম মহলে বিভাজন দেখা দিয়েছিল। সোভিয়েতপন্থী বামরা ভারতপন্থী অবস্থান নিয়েছিল, আর কিছু চীনা ঘরানার বাম ভারতকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বলে চিহ্নিত করেছিল। আজকের দ্বন্দ্ব যেন সেই পুরনো ছায়াকেই ফিরিয়ে এনেছে।

এই প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাম মহলের সামনে প্রশ্ন উঠে যায়: আপনি কীভাবে একটি রাষ্ট্রীয় সংঘাতে এমন অবস্থান নেবেন, যেখানে উভয় পক্ষই ডানপন্থী, উগ্র জাতীয়তাবাদী, এবং শ্রমিক শ্রেণির চরম দমনকারী?

ড. তৈমুর রহমানের বক্তব্যে যেমন উঠে আসে, “এই সংঘাত শ্রমিকের নয়, এই যুদ্ধ কৃষকের নয়। এই যুদ্ধ এক ধোঁয়াশা, যার মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্র নিজেদের দমন-পীড়নকে বৈধতা দেয়। আমাদের প্রয়োজন ভারত-পাকিস্তান শান্তির জন্য লড়াই করা, যুদ্ধের পক্ষে নয়।”