আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার দুপুরে শেখ হাসিনার ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ভারতে আত্মগোপনে রয়েছেন।
তবে তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণার পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগ করেন, এই রায় এসেছে ‘একটি অনির্বাচিত সরকারের প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত রিগড ট্রাইব্যুনাল’ থেকে, যার মূল লক্ষ্য তাঁর দল আওয়ামী লিগকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দুর্বল করে দেওয়া।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলনের সময়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পরপরই প্রকাশিত বিবৃতিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহম্মদ ইউনুসের বিশৃঙ্খল, সহিংস, সামাজিক ভাবে পিছিয়ে দেওয়া প্রশাসন কোটি কোটি বাংলাদেশিকে কোনওভাবেই বোকা বানাতে পারবে না। তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার এই প্রচেষ্টা তারা বুঝে গেছে।’
৭৮ বছর বয়সি বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যে তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচার পরিচালনা করেছে, তার কখনওই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য ছিল না। এমনকী, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সম্পর্কে প্রকৃত সত্য উদঘাটনেরও কোনও চেষ্টা করেনি ট্রাইব্যুনাল।’
উল্লেখ্য, সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের আগস্টে ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতে আত্মগোপনে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সোমবার তাঁর ফাঁসির সাজা ঘোষণা করে।
বঙ্গবন্ধুর মেয়ের ফাঁসি, বাংলাদেশেই মানবতাবিরোধী অপরাধে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলা দায়ের হয়েছিল।
সোমবার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করল। এই রায় ছিল মোট ৪৫৩ পাতার। রায়ের মোট ছ'টি অংশ ছিল। ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার রায়ের শেষ অংশ পড়ে শোনান।
হাসিনার সঙ্গেই, এই মামলা আরও দু'জনের বিরুদ্ধে। তাঁরা হলেন, বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের প্রাক্তন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
গত বছর আগস্টের শুরুতেই, প্রবল বিদ্রোহের মাঝেই, প্রাণ বাঁচিয়ে ভারতে চলে আসেন হাসিনা। হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়তেই, প্রথমে সোনার বাংলা যায় সেনার হাতে। তারপর গঠিত হয় অন্তবর্তী সরকার। তখন থেকে হাসিনা ভারতেই।
ভারতে রয়েছেন আসাদুজ্জামানও। অন্যদিকে অন্তবর্তী সরকার দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে, তরান্বিত করে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা। রায় ঘোষণার আগে থেকেই দফায় দফায় উত্তাল হয়েছে বাংলা।
আবার ঢাকা-সহ একাধিক জায়গায় রায় ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচারের জন্য বড় স্ক্রি্ন লাগানো হয়েছিল। বহু পড়ুয়ারা সেখানে জমা হয়েছেন। সকাল থেকেই একদিকে উৎকণ্ঠা, অপেক্ষা, আশঙ্কা, উত্তেজনা, ওপার বাংলার নানা ছবি ফুটে উঠেছে।
একদিকে যখন হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায়ের অংশ পড়া হচ্ছে, ঠিক তখনই ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙতে যায় বিক্ষোভকারীরা। দুটি এক্সকাভেটর নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিন রায় পড়ার সময়, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনাকে দোষী ঘোষণা করে। বিচারপতি জানিয়ে দেন, ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী তাঁরা শাস্তির যোগ্য।
রায় পড়ার সময়, বিচারপতি জানান, হাসিনা-সহ তিন অপরাধীর বিরুদ্ধে ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। যে সংখ্যা নেহাত কম নয়। আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল হাসিনাকে তিনটি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে। তারপরেই ঘোষণা করা হয় রায়। জানিয়ে দেওয়া হল, মুজিব কন্যার মৃত্যুদণ্ডের রায়। রায় ঘোষণার পরেই, আদালত কক্ষ হাততালিতে ফেটে পড়ে।
