আজকাল ওয়েবডেস্ক: আফ্রিকা জুড়ে এবং বিশ্বজুড়ে প্রগতিশীল ও জনপ্রিয় সংগঠনগুলো সুদানের মানুষের সঙ্গে সংহতির আহ্বান জানাচ্ছে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ভয়াবহ ও দীর্ঘায়িত যুদ্ধে নিপীড়িত সুদানি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে ঘানা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত নানা সংগঠন। তাদের একতাবদ্ধ আহ্বান—হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক, মানবিক সহায়তার করিডর খোলা হোক, এবং সুদানের মানুষের ন্যায়, শান্তি ও সার্বভৌমত্বের সংগ্রামকে সম্মান জানানো হোক।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র নিন্দার মুখে পড়েছে Rapid Support Forces (RSF)। সংস্থাটি তিন মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু বিশ্লেষক ও কর্মীরা মনে করছেন, এই তথাকথিত ‘মানবিক যুদ্ধবিরতি’ সুদানের দুই-দেড় বছরের গৃহযুদ্ধের কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।
ঘানার সমাজতান্ত্রিক সংগঠন Socialist Movement of Ghana (SMG) এক বিবৃতিতে ২০২৩ সাল থেকে চলা “সামরিক অভিজাতদের মধ্যকার গণহত্যামূলক সংঘাত”-এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, এই যুদ্ধ সাধারণ মানুষের ওপর অকল্পনীয় নির্যাতন চালাচ্ছে, অথচ সুদানি জনগণ ও তাদের গণসংগঠনগুলো—বিশেষ করে Sudanese Communist Party (SCP)—অসাধারণ সাহস ও রাজনৈতিক স্পষ্টতার সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
এসএমজি তাদের বিবৃতিতে যুদ্ধকে “সামরিক অভিজাতদের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও বিদেশি হস্তক্ষেপের পরিণতি” বলে আখ্যা দিয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমী শক্তি, এবং কিছু আরব ও পূর্ব আফ্রিকান রাষ্ট্রের “কর্পোরেট ও সম্পদ দখলের এজেন্ডা”কেও এই সংঘাতের অন্যতম প্ররোচক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সুদানের জনগণ পরিষ্কারভাবে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক গোষ্ঠীকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা কোনো সামরিক বা অভিজাত স্বার্থনির্ভর সমাধান মেনে নেবে না। ২০১৮ সালের গণঅভ্যুত্থান থেকে জন্ম নেওয়া সুদানের বিপ্লব আজও গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং জাতীয় সম্পদের উপর জনগণের পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।”
এদিকে International Peoples’ Assembly (IPA) ও Pan Africanism Today (PAT) যৌথভাবে এক বিবৃতিতে সুদানের চলমান “নৃশংস হত্যাযজ্ঞ”-এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বিশেষভাবে এল-ফাশের, বারা, দারফুর এবং কোর্দোফান-এ ঘটে চলা গণহত্যার উল্লেখ করে একে “গণহত্যামূলক অপরাধ” হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিবৃতিতে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, সাধারণ মানুষের সুরক্ষা, এবং যুদ্ধাপরাধের স্বাধীন তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “সুদানের জনগণ আজ এক ভয়াবহ যুদ্ধযন্ত্রের মুখোমুখি, কিন্তু তারা তাদের মর্যাদা, কমিউনিটি, এবং জীবনের অধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।” এই দুই সংগঠন বিশ্বজুড়ে শ্রমিক ইউনিয়ন, নারী সংগঠন, যুব আন্দোলন ও সামাজিক আন্দোলনগুলোকে সুদানের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে—সংগঠিত কর্মসূচি, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান এবং শিল্প-সাংস্কৃতিক সংহতির মাধ্যমে।
দক্ষিণ আফ্রিকার Abahlali baseMjondolo আন্দোলনও এক বিবৃতিতে সুদানের গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে। এই সংগঠনটি দেশের বস্তিবাসী ও তৃণমূল কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা এল-ফাশের ও দারফুর-এ আরএসএফ কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা, মৃত্যুদণ্ড, ও খাদ্যনিরোধকে “অমানবিক অপরাধ” বলে আখ্যা দিয়েছে। বিবৃতিতে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের আর্থিক সহায়তা ও ইউরোপীয় দেশগুলোর অভিবাসন নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিকে এই অপরাধের সহায়তাকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
“২০১৮ সালের ডিসেম্বরের অভ্যুত্থান ছিল শ্রমিক, নারী, ছাত্রছাত্রী ও শহুরে দরিদ্রদের এক গণতান্ত্রিক বিদ্রোহ,”—বলে উল্লেখ করেছে আবাহলালি আন্দোলন। “সেই বিদ্রোহ থেকে জন্ম নেয় তৃণমূল গণতন্ত্রের নতুন রূপ, ‘রেজিস্ট্যান্স কমিটি’, যারা আজও যুদ্ধের মধ্যেও খাদ্য, ওষুধ ও পারস্পরিক সহায়তা সংগঠিত করছে।”
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জেগে ওঠা এই সংহতির আহ্বান এখন এক স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা দিচ্ছে—সুদানের সংগ্রাম কেবল সুদানের নয়, গোটা আফ্রিকার মুক্তি সংগ্রামের অংশ। ঘানার সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ভাষায়: “চলুন আমরা ঐক্য, সার্বভৌমত্ব ও উন্নয়নের পক্ষে দাঁড়াই। সুদানের সংগ্রামই আফ্রিকার সংগ্রাম।”
