আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তানি সাংবাদিকের প্রতিবেদন নিয়ে হইচই পড়ে গেল গোটা বিশ্বে। নেটিজেনদের চোখে ‘নতুন চাঁদ নবাব মুহূর্ত’ তৈরি হয়েছে এই মহিলা সাংবাদিকের খবর তুলে ধরার মধ্যে। আসলে ব্যাপারটা কী ঘটেছিল? পাকিস্তানের সাংবাদিক মেহরুনিসার এক ভিডিও বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে উঠেছে। অনেকেই এটিকে তুলনা করছেন বিখ্যাত ‘করাচির চাঁদ নবাবের’ ভাইরাল ক্লিপের সঙ্গে। সম্প্রতি, পাকিস্তানে একাধিক জায়গায় বন্যার ছবি দেখা গিয়েছে। খবর করতে গিয়ে ক্যামেরার সামনে নিজের আতঙ্ক ও শারীরিক অবস্থার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মেরা দিল ইউন ইউন কর রা হ্যায়’ (আমার মন রীতিমত ধুকপুক করছে)। নৌকায় বসে লাইভ রিপোর্টিং করার সময় মেহরুনিসাকে স্পষ্টভাবে ভীত ও আতঙ্কিত দেখা যায়। তিনি বারবার চিৎকার করে বলেন— ‘My heart is going down… guys, please pray for us. I am very uncomfortable and scared.’

চ্যানেলটি নিজেই ভিডিওটি ইউটিউবে আপলোড করে, যা মুহূর্তের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। দু’টি আলাদা ভিডিওতে দেখা যায়, শুরুতে পেশাদার ভঙ্গিতে বন্যার পরিস্থিতি জানাচ্ছিলেন তিনি, কিন্তু ক্রমেই ভয় এবং অস্বস্তি তাঁকে গ্রাস করে। এই ভিডিওকে ঘিরে নেটদনিয়ায় শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। কেউ একে বলেছেন ‘আরও একটি চাঁদ নবাব মুহূর্ত’, আবার কেউ লিখেছেন— ‘বন্ধুরা, সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন মিমের জোগান পাওয়া গেল’। পাকিস্তানি লেখক রাজা রুমি ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করার পর বহু নেটিজেন মন্তব্য করেন যে, এটি জনপ্রিয়তায় রেকর্ড ভাঙতে চলেছে। তবে এই ঘটনা আবারও সামনে এনে দিল সাংবাদিকদের ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালনের বাস্তব চিত্র। একই সঙ্গে এটি প্রমাণ করছে, কাঁচা আবেগমিশ্রিত বা হিউমার-ভরা সংবাদ প্রতিবেদনের মুহূর্তগুলি এখন সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ভাইরাল হয়ে দর্শক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করছে।

প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর এবং প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ শনিবার জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩০৭। শুধুমাত্র বুনের জেলাতেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৮৪ জন। শুক্রবার প্রবল বর্ষণ ও মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে বিভিন্ন জেলায় হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়। ওই একদিনেই ২০০-রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। পিডিএমএ মুখপাত্র ফায়জি জানান, বাজওর, বুনের, সোয়াত, মানসেহরা, শাংলা, তোরঘর এবং বত্তাগ্রাম জেলাগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শাংলায় ৩৬ জন, মানসেহরায় ২৩ জন, সোয়াতে ২২ জন, বাজওরে ২১ জন, বত্তাগ্রামে ১৫ জন, লোয়ার দিরে পাঁচজন এবং আবোটাবাদে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত জুনের শেষ থেকে শুরু হওয়া বর্ষার মরশুমে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া ও উত্তরাঞ্চলে প্রবল বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধস ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ডেকে এনেছে।

বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন এবং বিপুল পরিমাণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।নদীর জলবণ্টন নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগ এর আগে সতর্ক করে জানিয়েছে যে, ভারত যদি পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত নদীগুলিতে অতিরিক্ত জল ছেড়ে দেয়, তাহলে দেশের বহু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। ভারী বর্ষা বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে, সেই সঙ্গেই হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি রয়েছে, যা হিমবাহের হ্রদ আউটবার্স্ট বন্যা (GLOFs) নামে পরিচিত। ফলে পাকিস্তানিদের শঙ্কা ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে। চাপ বাড়ছে শরিফ সরকারেরও। পিএমডির ডিরেক্টর মেহের সাহেবজাদ খান জানান যে, ভারতীয় বাঁধগুলিতে জল সঞ্চয়ের কারণে, রাভি নদীতে বর্তমানে হু-হু করে জল বইছে। এছাড়া, ঝিলাম এবং শতদ্রু নদীতে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যার কোনও আশঙ্কা নেই, তবে চন্দ্রভাগা নদীর পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগের। পিএমডির ডিরেক্টর মেহের সাহেবজাদ খান উল্লেখ করেছিলেন, বৃষ্টিপাত ২৫ জুলাই, শুক্রবার পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, তার পরে মাসের শেষের দিকে আরও এক দফা ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এই অব্যাহত বৃষ্টিপাত, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে, জলস্তর বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি করতে পারে এবং বন্যার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে।