আজকাল ওয়েবডেস্ক: সব প্রজাতি একইভাবে নিজেদের এলাকা গড়ে তোলে না। জীববৈচিত্র্যের বিশাল এক বিশ্লেষণ দেখিয়েছে, গড়পড়তা হিসাবে পুরনো বংশগত প্রজাতি নতুন প্রজাতির তুলনায় অনেক বড় ভৌগোলিক পরিসর দখল করে থাকে।


যদিও এই সম্পর্ক সর্বত্র সমান নয়। উদাহরণস্বরূপ, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীরা এই ধারা থেকে ব্যতিক্রম আর দ্বীপভূমির ক্ষেত্রে আলাদা প্রভাব দেখা যায়। তবুও বিবর্তনীয় সময় একটি প্রজাতি কতটা বিস্তৃত হবে তার অন্যতম প্রধান নির্ধারক হিসেবে উঠে এসেছে।


জার্মান সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটিভ বায়োডাইভার্সিটি রিসার্চ, লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ন্যাচুরালিস বায়োডাইভার্সিটি সেন্টারের বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে এক আন্তর্জাতিক দল ২৬,০০০-এর বেশি প্রজাতির বিবর্তনীয় বয়স ও বর্তমান বিস্তৃতি তুলনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মাছ, তালগাছ, স্থল ও সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী যা এখন পর্যন্ত এ ধরনের সবচেয়ে বড় গবেষণা।

আরও পড়ুন: মহাকাশের ‘মহা চ্যালেঞ্জ’, নিজেই সকলকে দেখালেন শুভাংশু শুক্লা, রইল ভিডিও


সবচেয়ে স্পষ্ট ফল হল: পুরনো প্রজাতি সাধারণত বড় পরিসরে বিস্তৃত। এই ধারা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী ছাড়া প্রায় সব গোষ্ঠীতে দেখা গেছে। প্রধান লেখক ন্যাচুরালিসের বিজ্ঞানী আদ্রিয়ানা আলজাতে বলেন, “পুরনো প্রজাতির বিস্তৃতি সাধারণত বড় হয়, কারণ তাদের হাতে থাকে বেশি সময়। কখনও কখনও কয়েক মিলিয়ন বছর—প্রথম আবির্ভাবের পর থেকে বিস্তার ঘটানোর জন্য।” তিনি আরও যোগ করেন, “বিবর্তনের দীর্ঘ সময়কালে এরা বেশি সুযোগ পেয়েছে প্রজনন, ছড়িয়ে পড়া, উপনিবেশ গড়া ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার। ফলে তারা আরও বড় ভৌগোলিক পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পেরেছে।”


কোনও প্রজাতি কত সহজে পরিবেশে চলাচল করতে পারেএই ‘ডিসপার্সাল অ্যাবিলিটি’ বিস্তৃতির গতি বাড়াতে বা কমাতে পারে। দীর্ঘ, তীক্ষ্ণ ডানা বিশিষ্ট শক্তিশালী উড়ন্ত পাখি বা বড় প্রাণীর মাধ্যমে বীজ ছড়ানো উদ্ভিদ দ্রুত বিস্তৃত পরিসরে পৌঁছে যায়। অন্যদিকে, দুর্বল গতিশীল প্রজাতি যেমন অনেক উভচর প্রাণী, ধীরে ধীরে ছড়ায়। তাদের ক্ষেত্রে বয়সের প্রভাব বেশি, কারণ প্রজন্ম ধরে বাধা অতিক্রম করতে হয়।


একই বয়সের দুটি প্রজাতির বিস্তৃতিতে আকাশ-পাতাল পার্থক্য দেখা দিতে পারে। একটি সহজেই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে, অন্যটি পারে না। এটাই প্রকৃতির স্বাভাবিক পরীক্ষা, যা বিশ্বের সর্বত্র—মহাদেশ থেকে দ্বীপপুঞ্জে—ঘটে থাকে।


ভূগোল কঠিন সীমা টেনে দেয়, আর তা দ্বীপের ক্ষেত্রে সবচেয়ে স্পষ্ট। দ্বীপে সীমাবদ্ধ স্থানীয় প্রজাতির পরিসর স্বাভাবিকভাবেই মূল ভূখণ্ডের প্রজাতির তুলনায় ছোট হয়। গবেষকরা এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, তবে একটি অপ্রত্যাশিত দিকও খুঁজে পেয়েছেন: দ্বীপে তরুণ ও পুরনো প্রজাতির বিস্তৃতির মধ্যে পার্থক্য মূল ভূখণ্ডের তুলনায় আরও বড়।


কেবল ভূগোলবিদ্যার কৌতূহল নয়, প্রজাতির বিস্তৃতি বিলুপ্তির ঝুঁকির অন্যতম শক্তিশালী পূর্বাভাস। সংকীর্ণ পরিসরে থাকা প্রজাতির সাধারণত জনসংখ্যা কম হয় এবং স্থানীয়ভাবে টিকে থাকার সুযোগও কম থাকে। এটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু পরিবর্তনের সময়, যখন আবাসস্থল দ্রুত বদলে যাচ্ছে। যদি পুরনো প্রজাতি তুলনামূলকভাবে বড় ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশে ছড়িয়ে থাকে, তবে তাদের মধ্যে এমন জেনেটিক বৈচিত্র্য থাকতে পারে যা নতুন অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করবে।