আজকাল ওয়েবডেস্ক: জাম্বিয়ার চিমফুনশি ওয়াইল্ডলাইফ অরফানেজে এক দল চিম্পাঞ্জির অদ্ভুত আচরণ বিজ্ঞানীদের নজর কেড়েছে। একটি পুরুষ চিম্পাঞ্জি, নাম জুমা, হঠাৎ করেই ঘাস ঢোকাতে শুরু করে নিজের কানে। এরপর দেখা যায়, সে সেই ঘাস বা কাঠি পায়ুতেও ঢোকাচ্ছে—হাত ছাড়াই। এই অভ্যাস তার দলের আরও কয়েকজন সদস্যের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই। এভাবে আচরণ ছড়ানোর বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে আন্তর্জাতিক পত্রিকা Behaviour-এ। গবেষণায় বলা হয়েছে, এই আচরণটির কোনও ব্যবহারিক উপকারিতা নেই, কোনও খাদ্য বা পুরস্কারও মিলছে না, তবুও একে অন্যের থেকে শেখা হচ্ছে।
২০১০ সালে এই অভ্যাসের সূচনা হয়েছিল এক মহিলা চিম্পাঞ্জি ‘জুলি’-র হাত ধরে, যে নিজের কানে ঘাসের তোড়া ঢুকিয়ে রাখত। শুরুতে বিজ্ঞানীরা একে টুল ব্যবহারের চেষ্টা ভাবলেও পরে বুঝতে পারেন, এটি নিছক সামাজিক অভ্যাস—এক ধরনের ফ্যাশন। জুলি যা করছিল, তার দলেও অন্যরা তা করতে শুরু করে। ২০২৩-এ জুমা সেই পুরনো ফ্যাশন ফিরিয়ে আনে, তবে নতুন রূপে—এইবার শুধু কানে নয়, পায়ুতেও। গবেষকরা দেখেছেন, জুমার আচরণ দলবদ্ধভাবে অনুকরণ করা হয়েছে, এবং তা অন্য কোনও দলের মধ্যে দেখা যায়নি। গবেষণায় ব্যবহৃত নেটওয়ার্ক-বেসড ডিফিউশন অ্যানালিসিস স্পষ্টভাবে দেখায়, এই অভ্যাস পুরোপুরি সামাজিক শেখার ফল।
আরো পড়ুন: রাতের আদরে অনিহা স্ত্রী'র? এই কাজগুলো করলেই ঝড় উঠবে বিছানায়
গবেষক এডউইন ভ্যান লিউয়েন জানান, জুলি এবং জুমার দুই দলেই একই হ্যান্ডলার কাজ করতেন, যারা নিজেরাও মাঝে মাঝে ঘাস বা ম্যাচস্টিক দিয়ে কান পরিষ্কার করতেন। সম্ভবত সেখান থেকেই চিম্পাঞ্জিদের মধ্যে এই ধারণা আসে। তবে পায়ুতে ঘাস ঢোকানোর বিষয়টি সম্পূর্ণ চিম্পাঞ্জিদের নিজস্ব উদ্ভাবন। মানুষের সমাজে যেমন ফ্যাশন, টিকটক ট্রেন্ড, কানের দুল বা অপ্রয়োজনীয় সাজগোজের মাধ্যমে পরিচয় ও সংহতি তৈরি হয়, ঠিক তেমনই এই শিম্পাঞ্জিরাও নতুন পরিবেশে নিজেদের মেলাতে চেয়েছে নতুন আচরণের মাধ্যমে। তাদের এই ‘অর্থহীন’ অভ্যাস আসলে সামাজিক যোগাযোগ ও গোষ্ঠীগত পরিচয়ের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
গবেষকেরা বলছেন, এই ঘটনা নিছক মজার শিম্পাঞ্জি কাণ্ড নয়—বরং এটি একটি জানালা, যেখানে দেখা যায় সংস্কৃতি ও সামাজিক আচরণের বীজ কেবল মানুষের মধ্যেই নয়, প্রাণীদের মধ্যেও গভীরভাবে রয়ে গেছে। তারা যেমন মানুষের আচরণ অনুকরণ করতে পারে, তেমনি নিজেরাও নতুন সামাজিক রীতিনীতি তৈরি করতে সক্ষম। এই আবিষ্কার আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানব সংস্কৃতির ভিত্তি—ভাষা, ধর্ম, ফ্যাশন, আচার—সবকিছুর গোড়ায় রয়েছে একটি সহজ ব্যাপার: সামাজিক শেখা ও অনুকরণ। আর সেই ক্ষমতা শুধু মানুষের নয়, চিম্পাঞ্জিরও আছে।
