আজকাল ওয়েবডেস্ক: নাসার ১.৪ টন ওজনের নীল গেরেলস সুইফট অবজারভেটরি ধীরে ধীরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দিকে নেমে আসছে। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের দুশ্চিন্তা—যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে এই মহাকাশ টেলিস্কোপ আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। তাই এখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চেষ্টা চলছে সেটিকে উচ্চতর কক্ষপথে ঠেলে দেওয়ার।
সুইফট অবজারভেটরি কী?
২০০৪ সালে উৎক্ষেপিত সুইফট টেলিস্কোপ মূলত গামা-রে বার্স্ট শনাক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। এগুলো হল মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিস্ফোরণ। টেলিস্কোপটি দ্রুত ঘুরে গিয়ে এই ঘটনাগুলোকে গামা-রে, এক্স-রে, অতিবেগুনি ও দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে রেকর্ড করে, এবং পৃথিবীতে থাকা বিজ্ঞানীদের তাৎক্ষণিক তথ্য পাঠায়। পাশাপাশি সুইফট ব্ল্যাক হোল, নিউট্রন তারা, সুপারনোভা এবং নানা উচ্চশক্তির মহাজাগতিক ঘটনার ওপর নজর রাখছে। বর্তমানে টেলিস্কোপটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৫৮৫ কিমি উচ্চতার নিম্ন-কক্ষপথে অবস্থান করছে। তবে বায়ুমণ্ডলের টানের কারণে সেটি ক্রমে নিচে নামছে।
আরও পড়ুন: ইউপিআই-এ আসছে নতুন সুবিধা: এখন কেনাকাটা করা যাবে কিস্তিতে
নাসার হিসাব অনুযায়ী, যদি কোনও পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ টেলিস্কোপটির ৯০% সম্ভাবনা রয়েছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশ করে সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ার। অথচ এর দাম প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার এবং মহাকাশ বিজ্ঞানে এর অবদান অপরিসীম।
এই পরিস্থিতি থেকে টেলিস্কোপকে বাঁচাতে নাসা অ্যারিজোনা-ভিত্তিক কোম্পানি ক্যাটালিস্ট স্পেস টেকনোলজিস-কে একটি নতুন দায়িত্ব দিয়েছে। কোম্পানিটি “লিঙ্ক”নামের একটি বিশেষ মহাকাশযান পাঠাবে, যা সুইফটকে ধরে উচ্চতর কক্ষপথে ঠেলে দেবে।
এই কাজের জন্য নাসা ক্যাটালিস্টকে ৩০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে। ২০২৬ সালের মে মাসে এই ডকিং ও কক্ষপথ-বৃদ্ধি মিশন শুরু হবে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, সুইফটকে কখনোই সার্ভিসিং বা মেরামতের জন্য তৈরি করা হয়নি। এর মধ্যে প্রপালশন সিস্টেম বা ডকিং সহায়ক যন্ত্র নেই। তাই প্রকৌশলীদের বিশেষ কৌশল বের করতে হয়েছে।
ক্যাটালিস্টের সিইও অ্যান্ডি লি জানিয়েছেন, লিঙ্ক মহাকাশযানে থাকবে একটি রোবোটিক অ্যাটাচমেন্ট সিস্টেম, যা সুইফটের ছোট ধাতব রিম বা ফ্ল্যাঞ্জে আটকে যাবে। এরপর লিঙ্ক নিজের থ্রাস্টার ব্যবহার করে ধীরে ধীরে টেলিস্কোপটিকে উঁচু কক্ষপথে ঠেলে দেবে। এতে সুইফট আরও কয়েক বছর মহাকাশে বৈজ্ঞানিক কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।
মহাকাশযান সার্ভিসিং ও কক্ষপথে রক্ষণাবেক্ষণের প্রযুক্তি এখন দ্রুত বিকাশ পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি শুধু বৈজ্ঞানিক নয়, কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। পেন্টাগন ও নাসা উভয়েই সুইফটের ডকিং মিশন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে, কারণ সফল হলে এটি বৃহত্তর স্যাটেলাইট সার্ভিসিংয়ের সম্ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করবে।
এর মধ্যেই চীন উন্নত কক্ষপথে স্যাটেলাইট নাড়াচাড়া ও ধরার প্রযুক্তির পরীক্ষা করেছে, যা ওয়াশিংটনে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এমন প্রযুক্তি মহাকাশে প্রতিরক্ষার পাশাপাশি আক্রমণাত্মক কাজেও ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
তবে নাসার জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল বৈজ্ঞানিক লক্ষ্য—সুইফটকে বাঁচিয়ে রাখা। কারণ এই টেলিস্কোপ মহাবিশ্বের অন্ধকারতম কোণ, ব্ল্যাক হোলের রহস্য, সুপারনোভার ধ্বংসযজ্ঞ এবং অদ্ভুত মহাজাগতিক ঘটনার রহস্য উদঘাটনে অনন্য ভূমিকা রাখছে।
