শুক্রবার শেয়ারবাজার দিনভর অস্থির লেনদেনের পর প্রায় সমতল অবস্থায় বন্ধ হয়েছে। সেনসেক্স শেষ পর্যন্ত প্রায় ৯৫ পয়েন্ট নিচে নেমে সামান্য দুর্বল অবস্থায় দিন শেষ করে, আর নিফটি সূচক ২৫,৫০০ স্তরের ঠিক নিচে স্থিতিশীল হয়।
2
11
বাজারে এই নিরপেক্ষ ধারা বজায় ছিল মূলত মিশ্র বিনিয়োগকারীর মনোভাবের কারণে—যেখানে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের টানা বিক্রি বাজারে চাপ তৈরি করলেও দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সীমিত ক্রয়চাপ সূচককে বড় পতন থেকে রক্ষা করেছে।
3
11
আন্তর্জাতিক বাজারে দুর্বল প্রবণতা, বিশেষ করে মার্কিন প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্টকগুলির মন্দ পারফরম্যান্সের কারণে ভারতীয় বাজারেও সতর্কতা দেখা গেছে। এর সঙ্গে আর্থিক ও রিয়েল এস্টেট খাতে লাভ তোলার প্রবণতা বাজারের গতি শ্লথ করেছে।
4
11
তবে ধাতু খাত আজকের সেশনে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স দেখিয়ে বাজারকে স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। আন্তর্জাতিক পণ্যদ্রব্যের দামে স্থিতিশীলতা এবং সরবরাহজনিত উদ্বেগ কমে যাওয়ায় এই খাতটি শক্তিশালী অবস্থান নেয়।
5
11
অন্যদিকে আর্থিক, রিয়েল এস্টেট ও মিডিয়া খাতে ব্যাপক বিক্রির চাপ সূচককে টেনে নিচে নামায়। নির্দিষ্ট কিছু সংস্থার ফলাফলও শেয়ারদামে প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, লুম্যাক্স ইন্ডাস্ট্রিজ চলতি ত্রৈমাসিকে বার্ষিক ভিত্তিতে ২৫.৮% নিট মুনাফা বৃদ্ধির ঘোষণা দিলেও পরিচালন ব্যয়ের কারণে এর শেয়ারদাম কমে যায়।
6
11
এদিকে SEBI-এর শর্ট সেলিং ও স্টক লেন্ডিং/বোরোয়িং কাঠামো পুনর্বিবেচনার ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরও সতর্কতা তৈরি করে। অপরদিকে, অপরিশোধিত তেলের দাম ৬৩.৫ ডলার প্রতি ব্যারেল স্তরে নামায় মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা কিছুটা কমলেও জ্বালানি খাত চাপের মধ্যেই থাকে।
7
11
আগামী দিনে বাজার সতর্ক মনোভাবে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এখন মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন অর্থনৈতিক তথ্য, বিশেষ করে ISM PMI রিপোর্টের দিকে নজর রাখবেন, যা বিশ্বের ঝুঁকির মনোভাব ও ভারতের প্রতি তহবিল প্রবাহে প্রভাব ফেলতে পারে। দেশীয়ভাবে, রিজার্ভ ব্যাংকের নীতিগত অবস্থান ও বড় কর্পোরেট কোম্পানির দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের ফলাফল বাজারের গতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
8
11
প্রযুক্তিগত দিক থেকে, শুক্রবার নিফটি ৫০ সূচক দিনটি দুর্বলভাবে গ্যাপ-ডাউন ওপেন করলেও ৫০-দিনের EMA স্তরে সাপোর্ট পায়। সূচকটি দিনভর দ্রুত পুনরুদ্ধার করে সকালবেলার গ্যাপ পূরণ করলেও উচ্চস্তরে গতি ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় এবং ২৫,৫০০-এর কাছাকাছি ০.০৭% পতনে শেষ হয়।
9
11
দৈনিক চার্টে নিফটি একটি ‘হাই-ওয়েভ ক্যান্ডেল’ গঠন করেছে, যা দিনের দুই প্রান্তে দীর্ঘ উইক নির্দেশ করে উচ্চমাত্রার অস্থিরতা। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, উপরের স্তরে বিক্রেতারা সক্রিয় থাকলেও নিম্নস্তরে ক্রেতারা ভালো সাপোর্ট দিয়েছেন, ফলে সূচকটি নিম্ন থেকে প্রায় ২২৫ পয়েন্ট ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
10
11
সেক্টরভিত্তিকভাবে মিশ্র পারফরম্যান্স দেখা গেছে—Nifty Metal, Financial Services, PSU Bank ও Auto সূচক ছিল এগিয়ে, আর IT ও FMCG খাতে হালকা প্রফিট বুকিং লক্ষ্য করা গেছে। মধ্য ও ক্ষুদ্র শেয়ারেও মিশ্র চিত্র: Nifty Midcap 100 সূচক ০.৬৩% বৃদ্ধি পেলেও Smallcap 100 সূচক ০.১৬% হ্রাস পায়।
11
11
আগামীতে ২৫,৩৩০–২৫,৩০০ অঞ্চলটি নিফটির তাৎক্ষণিক সাপোর্ট হিসেবে কাজ করবে। এই স্তর ভাঙলে সূচক আরও নেমে ২৫,১৫০ পর্যন্ত যেতে পারে। বিপরীতে, ২৫,৬০০–২৫,৬২০ অঞ্চলটি তাৎপর্যপূর্ণ রেজিস্ট্যান্স, এবং এর উপরে টিকে গেলে বাজারে নতুন ঊর্ধ্বমুখী গতি ফিরে আসতে পারে।