আজকাল ওয়েবডেস্ক: গাজার চলমান মানবিক বিপর্যয় নিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীরা সরব হয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে লেখা এক উন্মুক্ত চিঠিতে তারা কঠোর ভাষায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ৪,০০০-এরও বেশি বিজ্ঞানী এতে স্বাক্ষর করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গাজায় কৃত্রিমভাবে তৈরি করা খাদ্য সংকট “অসহনীয়” অবস্থার সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং মৌলিক কল্যাণ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। শিশুদের পড়াশোনা কার্যত বন্ধ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসামরিক পরিকাঠামো পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস হচ্ছে, আর মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভারতের দাবিতেই সিলমোহর, কানাডায় খালিস্তানি জঙ্গি নিয়ে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন ১৪ জন নোবেলজয়ী, পাঁচজন ফিল্ডস মেডেলপ্রাপ্ত গণিতবিদ, ২০ জন ব্রেকথ্রু প্রাইজ প্রাপক, ৩৪ জন ডিরাক পুরস্কার বিজয়ী এবং চারজন উলফ প্রাইজজয়ী বিজ্ঞানী। নোবেলজয়ীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ জেরার্ড ’ট হুফ্ট এবং ডেভিড পলিটজার, গণিতবিদ রজার পেনরোজ, পদার্থবিদ তাকাকি কাজিতা ও জর্জিও পারিসি।
চিঠির মূল বক্তব্য
চিঠিতে বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন—
গাজায় যে মানবসৃষ্ট খাদ্য সংকট চলছে, তা দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থার জন্ম দিচ্ছে।
চিকিৎসা সেবা কার্যত নেই, শিশুদের শিক্ষা বন্ধ, আর সাধারণ মানুষের কল্যাণের প্রতি কোনো মনোযোগ নেই।
হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করা হচ্ছে।
তারা ইজরায়েল সরকারকে অবিলম্বে এই মানবিক বিপর্যয় বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা একতরফাভাবে কেবল ইজরায়েলকে দোষারোপ করেননি। চিঠিতে বলা হয়েছে, এই জটিল সংকটের সূত্রপাত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের নৃশংস আক্রমণ ও পণবন্দী করে রাখার ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা এই আক্রমণকে নিন্দা করেছেন এবং পণবন্দীদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি তুলেছেন।
তবে বিজ্ঞানীরা একসঙ্গে জোর দিয়ে বলেছেন, “ইতিহাসে কিছুই নেই—কোনো ঘটনাই নয়—যা বর্তমান গাজার সাধারণ মানুষের ওপর নেমে আসা ভয়াবহতাকে ন্যায্যতা দিতে পারে।” বিজ্ঞানীরা সকল সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন অবিলম্বে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং এই মানবিক ট্র্যাজেডি বন্ধ হয়। তাদের মতে, এটি মানবতার পক্ষে এক যৌথ নৈতিক দায়িত্ব। এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, কারণ এত বিপুল সংখ্যক খ্যাতনামা বিজ্ঞানী একসঙ্গে মানবিক সংকট নিয়ে সরব হওয়া বিরল ঘটনা।
ইজরায়েল প্যালেস্তাইন সংঘাত আধুনিক বিশ্বের দীর্ঘস্থায়ী ও জটিলতম সংঘাতগুলির একটি। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের আকস্মিক আক্রমণের পর থেকে গাজায় ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়। ইজরায়েল পাল্টা অভিযানে ব্যাপক বোমাবর্ষণ ও অবরোধ চালায়, যার ফলে কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ নিহত হন এবং লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েন। গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়, সৃষ্টি হয় কৃত্রিম দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি। শিশু ও বয়স্কসহ সাধারণ মানুষ চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মহল যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার দাবি তুললেও, ইজরায়েল নিরাপত্তার যুক্তি দেখিয়ে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে হামাস এখনও পণবন্দীদের মুক্তি দেয়নি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। জাতিসংঘসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন ও আলোচনার পথে আসার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু স্থায়ী সমাধান এখনো অধরাই থেকে গেছে, আর সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে সাধারণ প্যালেস্তাইন জনগণ।
