আজকাল ওয়েবডেস্ক: কোয়েলাক্যন্থ মাছকে প্রায়ই বলা হয় "জীবন্ত জীবাশ্ম"। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে ধরে নিয়েছিলেন যে কোটি কোটি বছর আগে এই প্রাণীটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু ১৯৩৮ সালে ভারত মহাসাগরে হঠাৎ ধরা পড়ে এই মাছ যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। এরপর আরও কিছু নমুনা পাওয়া গেলেও এর জীবাশ্ম-ইতিহাসে অনেক ফাঁক থেকে গিয়েছিল।
সম্প্রতি ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয় ও উরুগুয়ের একদল গবেষক সেই ফাঁক পূরণের পথে বড় পদক্ষেপ নিলেন। তারা এমন কিছু জীবাশ্ম চিহ্নিত করেছেন যা গত দেড়শ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাদুঘরের সংগ্রহে অচেনা অবস্থায় পড়ে ছিল। নতুনভাবে শনাক্ত করা এসব নমুনা ট্রায়াসিক যুগের শেষ ভাগের অর্থাৎ প্রায় ২০ কোটি বছর আগের। তখন আজকের যুক্তরাজ্য ছিল উষ্ণমণ্ডলীয় অক্ষাংশে, ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জ ও অগভীর সমুদ্রের পরিবেশে।
আরও পডুন: মোদি-ট্রাম্প সম্পর্কে নতুন উষ্ণতা? জন্মদিনের শুভেচ্ছা থেকে শুরু নতুন সুর
গবেষণার নেতৃত্ব দেন জ্যাকব কুইন। তাঁর তত্ত্বাবধায়ক প্রফেসর মাইক বেন্টন বলেন, “ব্রিস্টলে মাস্টার্স পড়ার সময় জ্যাকব বুঝতে পারে, অনেক ফসিল যেগুলো আগে সামুদ্রিক সরীসৃপ ‘প্যাকিস্ট্রোফিয়াস’-এর বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল, আসলে সেগুলো কোয়েলাক্যন্থ মাছের। প্যাকিস্ট্রোফিয়াস ও কোয়েলাক্যন্থের ফসিল দেখতে অবিশ্বাস্যভাবে মিল আছে। কিন্তু জ্যাকব দেশজুড়ে বিভিন্ন সংগ্রহশালায় গিয়ে দেখল, একই ভুল বারবার হয়েছে।”
সহ-লেখক এবং উরুগুয়ের কোয়েলাক্যন্থ বিশেষজ্ঞ পাবলো তোরিনো জানান, “আমরা যেসব জীবাশ্ম চিহ্নিত করেছি, সেগুলো আলাদা আলাদা অংশে পাওয়া গেলেও পরিষ্কার বোঝা যায় যে এগুলো বিভিন্ন বয়স, আকার ও প্রজাতির মাছের। কিছু নমুনার দৈর্ঘ্য এক মিটার পর্যন্ত, যা প্রমাণ করে তখন একটি জটিল ও বৈচিত্র্যময় কমিউনিটি ছিল।”
ড. ডেভিড হোয়াইটসাইড, গবেষণার আরেক সহ-তত্ত্বাবধায়ক, যোগ করেন, “এসব ফসিল মূলত ব্রিস্টল ও মেন্ডিপ হিলস অঞ্চল থেকে এসেছে। ট্রায়াসিক কালে এই জায়গা ছিল অগভীর উষ্ণ সমুদ্রের দ্বীপপুঞ্জ। আধুনিক কোয়েলাক্যন্থের মতো তখনও তারা সমুদ্রতলের কাছে ওঁৎ পেতে থাকত, যা সামনে পেত তাই শিকার করত। মজার বিষয়, তারা সম্ভবত ছোট প্যাকিস্ট্রোফিয়াস সরীসৃপও খেত—যাদের ফসিল এতদিন ধরে কোয়েলাক্যন্থের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছিল।”
এই আবিষ্কার শুধু একটি বিলুপ্তপ্রায় মাছের ইতিহাসেই নয়, বরং ট্রায়াসিক যুগের সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কেও নতুন ধারণা দেয়। এতদিন ব্রিটেনে কোয়েলাক্যন্থের ফসিল সীমিতভাবে জানা ছিল, আর সেগুলোর অনেকটাই ছিল ভুলভাবে শনাক্ত। কিন্তু এবার পরিষ্কার হল সেই সময়ে একাধিক প্রজাতি এবং বিভিন্ন আকারের কোয়েলাক্যন্থ বাস করত।
গবেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের ভুল শনাক্তকরণের ঘটনা আরও অনেক ফসিল সংগ্রহে থাকতে পারে। নতুন প্রযুক্তি ও পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে হয়তো আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসবে। প্রায় ২০ কোটি বছর আগের এই জীবাশ্ম প্রমাণ করছে, কোয়েলাক্যন্থ কেবল বেঁচে ছিল না, বরং তারা জটিল পরিবেশে সক্রিয় শিকারি হিসেবেই অবস্থান করত। তাই এই আবিষ্কার ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’-এর অধ্যায়কে আরও সমৃদ্ধ করছে এবং পৃথিবীর প্রাচীন সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে।
