আজকাল ওয়েবডেস্ক: মস্কোর সঙ্গে এখনও ব্যবসা করছে এমন দেশগুলির উপর ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক চাপানোর পক্ষে জোর সওয়াল করলেন ট্রাম্প। এই মর্মে আমেরিকার নতুন সেনেট আইনকেও সমর্থন করবেন বলেও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। 

ফ্লোরিডা থেকে হোয়াইট হাউসের উদ্দেশ্যে রওনার সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, "রিপাবলিকানরা এমন কঠোর একটি আইন তৈরি করছে যা রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা যেকোনও দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।" আমেরিকার কংগ্রেসে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পর নতুন এই আইন আনার বিষয়টি আরও গতি পেয়েছে

সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা জন থুন গত অক্টোবরে বলেছিলেন যে, তিনি এই পদক্ষেপটি ভোটে আনতে প্রস্তুত ছিলেন কিন্তু তখনই তিনি এই বিষয়ে কোনও কোনও নির্দিষ্ট দিন বলতে চাননি।

রাশিয়া থেকে জ্বালানি ক্রেতাদের লক্ষ্যবস্তু 
ব্লুমবার্গের মতে, এই আইন ট্রাম্পকে রাশিয়ার তেল বা গ্যাস ক্রয়কারী এবং ইউক্রেনের প্রতি অপর্যাপ্ত সমর্থনকারী দেশগুলি থেকে আমদানির উপর ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেবে। এই বিধানটি সরাসরি চীন এবং ভারত-সহ রাশিয়ান জ্বালানির প্রধান গ্রাহকদের লক্ষ্য করে তৈরি হচ্ছে। ট্রাম্প রবিবার বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে বলেন, "আমরা এই আইনের কবলে ইরানকেও যুক্ত করতে পারি।" 

ওয়াশিংটনের বক্তব্য হল, রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারছে কিছু দেশের জন্য। আসলে সেই দেশগুলি রাশিয়া থেকে তেল এবং অন্যান্য জ্বালানি কিনছে। ফলে রাশিয়ার হাতে টাকা আসছে। তারা যুদ্ধ করছে। আর এখানেই আপত্তি আমেরিকার। তাই তারা রাশিয়ার থেকে যেই সব দেশ জ্বালানি কিনছে বা ব্যবসা করছে, তাদের উপর ইতিমধ্যেই শুল্ক বসিয়েছে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। তাই তারা আরও বড় ধাক্কা দিতে দিতে মরিয়া। তাই এবার রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস কেনা দেশগুলির উপর ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক চাপানোর বিল পাশ করানো হবে। 

আশঙ্কা যে এরপ ফলে বিশ্ব অর্থনীতি ধাক্কা খাবে। নতুন করে তৈরি হতে পারে অনিশ্চয়তা।

বিলটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন মস্কো পূর্ব ইউক্রেনের রেল হাব পোকরোভস্ক দখলের প্রচেষ্টা তীব্র করেছে, একই সঙ্গে দেশজুড়ে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, ইউক্রেন রাশিয়ার তেল পরিকাঠামোতে দীর্ঘমেয়াদী আক্রমণ বাড়িয়েছে।

ফল্টোদিকে ডেমোক্র্যাট এবং বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান কয়েক মাস ধরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চাপ দিচ্ছেন, ক্রেমলিনকে সংঘাত দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ এনেছেন এবং কূটনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। ট্রাম্প এর আগে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আলোচনার টেবিলে আনার চেষ্টা করার সময় নতুন নিষেধাজ্ঞা গ্রহণের বিরোধিতা করেছিলেন। এই বছরের শুরুতে আলাস্কায় পুতিনের আতিথেয়তা কোনও সাফল্য আসেনি।

ভারতের উপর মার্কিন শুল্ক
রাশিয়ার তেল ক্রয়ের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ২০২৫ সালের আগস্টে, ট্রাম্প ভারতীয় রপ্তানির উপর বিদ্যমান ২৫ শতাংশ পারস্পরিক শুল্কের উপরে ২৫ শতাংশ "রাশিয়ান তেল" সারচার্জ যোগ করে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, ফলে শুল্কের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৫০ শতাংশ। ওয়াশিংটন বলেছে যে, এই পদক্ষেপটি "রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রকে পরোক্ষভাবে অর্থায়নকারী" দেশগুলিকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

ভারত আবশ্য কিছুটা নরম হয়ে তখন থেকেই রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল গ্রহণ হ্রাসের ইঙ্গিত দিয়েছে। অক্টোবরে, ট্রাম্প বলেছিলেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন যে নয়াদিল্লি তার রাশিয়ান তেল ক্রয় "উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস" করেছে এবং পরামর্শ দিয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক কমাতে পারে।  

ওয়াশিংটন ভারতের রাশিয়ান তেল ক্রয়ের বিষয়ে তার পূর্বের সংঘাতপূর্ণ অবস্থান থেকে সরে এসেছে, কয়েক মাসের চাপানউতোর এবং স্থগিত আলোচনার পরে বাণিজ্যে গঠনমূলকভাবে জড়িত হওয়ার ইচ্ছার ইঙ্গিত দেয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, রাশিয়া বৃহৎ আকারের সামরিক অভিযান চালিয়ে যেতে সক্ষম। পশ্চিমী গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বলেছে যে, এশিয়ান অর্থনীতির সঙ্গে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি অংশীদারিত্ব পূর্ববর্তী পদক্ষেপের প্রভাবকে কমিয়ে দিয়েছে।