আজকাল ওয়েবডেস্ক: নেপালে চলমান আন্দোলনের মধ্যে ভারতীয় পর্যটকদের বহনকারী একটি বাসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, অন্ধ্র প্রদেশের ৪৯ জন যাত্রী বহনকারী ওই বাসটি ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তরপ্রদেশের সোনাউলি সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা হঠাৎ পাথর ছোড়ে আক্রমণ চালায়। ঘটনায় নারী ও বয়স্কসহ বহু যাত্রী আহত হন। আহতদের কাঠমান্ডুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ভারতীয় দূতাবাস ও নেপাল সরকারের সহায়তায় বিশেষ বিমানে তাঁদের ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়।
বাস চালক রামু নিশাদ জানান, “আমরা পশুপতিনাথ মন্দিরে দর্শন শেষে ফিরছিলাম, হঠাৎ একদল লোক বাসকে ঘিরে আক্রমণ করে। ভিতরে নারী ও প্রবীণ যাত্রী থাকলেও তারা বিন্দুমাত্র পরোয়া করেনি।”
নেপালে বর্তমানে তুমুল অস্থিরতা চলছে। সরকার সম্প্রতি ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—যেমন ফেসবুক, ইউটিউব ও এক্স (টুইটার)—নিষিদ্ধ করেছিল। পরবর্তীতে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও আন্দোলন থামেনি। ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে তরুণ প্রজন্ম, যাদের “জেন জি” বলা হচ্ছে। তাঁদের দাবি, পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে এবং সংবিধান সংশোধন করে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, চলমান বিক্ষোভে শুক্রবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫১-এ দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং আরও ২১ জন দগ্ধ ও গুরুতর আহত অবস্থায় প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে একজন ভারতীয় নাগরিক ও তিনজন পুলিশকর্মীও রয়েছেন।
বিক্ষোভকারীদের মূল দাবি, প্রশাসনিক দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের অবসান ঘটাতে হবে। সরকারের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন তাঁরা। আন্দোলন আরও তীব্র হয় যখন সামাজিক মাধ্যমে “নেপো বেবিজ” প্রবণতা ভাইরাল হয়। এতে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ছবি প্রকাশিত হয়, যা সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে প্রকট বৈষম্য তুলে ধরে।
৮ সেপ্টেম্বর থেকে কাঠমান্ডু, পোখরা, বুটওয়াল ও বিরগঞ্জসহ বিভিন্ন শহরে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। সরকার সাইবার নিরাপত্তা ও কর ফাঁকি রোধের যুক্তি দেখিয়ে সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধ করেছিল, যা বিক্ষোভের প্রধান সূত্রপাত ঘটায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাঠমান্ডুসহ একাধিক শহরে সেনাবাহিনী কারফিউ জারি করেছে। আজ বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে এবং পুনরায় সন্ধ্যা ৭টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত তা কার্যকর করা হবে।
এদিকে, বিদেশি পর্যটকরা যাতে বিপাকে না পড়েন সেজন্য নেপাল সরকার সাময়িক ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে। ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৈধ ভিসাধারীরা অতিরিক্ত ফি ছাড়াই প্রস্থান অনুমতি ও ভিসা নিয়মিত করতে পারবেন। এই সুবিধা বিমানবন্দরসহ সীমান্তবর্তী প্রস্থান পয়েন্টগুলোতেও পাওয়া যাবে। বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
