আজকাল ওয়েবডেস্ক: এবার এক ঐতিহাসিক আবিষ্কারে হাত মেলাল ভারত এবং জাপান। দুই এশিয়ান জায়ান্ট একসঙ্গে হাত মিলিয়ে বিশ্বের অন্যতম উচ্চ প্রযুক্তির টেলিস্কোপ নির্মাণ করতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে।

এই টেলিস্কোপের নাম থার্টি মিটার টেলিস্কোপ। জানা গিয়েছে, এই অত্যাধুনিক অপটিক্যাল-ইনফ্রারেড টেলিস্কোপের ৩০ মিটার ব্যাসের বিশাল প্রাইমারি মিররের মাধ্যমে মহাবিশ্ব সম্বন্ধে ধারণা নতুন স্তরে পৌঁছে যেতে পারে।

মানবজাতির সবচেয়ে বড় প্রশ্ন পৃথিবীর বাইরে কি প্রাণ আছে? তার উত্তর খুঁজতেও সাহায্য করতে পারে এই বিশেষ টেলিস্কোপ। আন্তর্জাতিক এই প্রকল্পে ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় অংশীদার।

এর প্রধান উদ্দেশ্য মহাকাশের গভীরে নজর রাখা, বিশেষ করে ব্ল্যাকহোল, দূরের ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ এবং বিশেষভাবে পৃথিবীর বাইরে ভিনগ্রহে জীবনের সম্ভাবনা খোঁজা।

জাপানের জাতীয় মহাকাশ নীতি কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাকু সুনেতা বলেন, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দূরবর্তী মহাবিশ্ব থেকে আরও বেশি আলোক সংগ্রহের জন্য বড় মিরর চান। মিরর যত বড় হবে, তত বেশি অজানা বস্তু আবিষ্কার করা সম্ভব হবে।’

জানা গিয়েছে, ৩০ মিটার প্রাইমারি মিররটি বর্তমান টেলিস্কোপগুলোর তুলনায় বহুগুণ বড় হবে। ঐতিহ্যগত এক বিশাল মিররের পরিবর্তে এতে থাকবে ৫০০টি ক্ষুদ্র আয়না, যেগুলো মিলিয়ে তৈরি হবে বিশাল প্রাইমারি মিরর। প্রতিটি মিররের অবস্থান ও কোণ নিখুঁতভাবে সামঞ্জস্য করতে যে প্রযুক্তি লাগবে, তার বড় অংশই তৈরি করছে ভারত।

ড. সুনেতা জানান, ‘একটি বড় মিররের বদলে এখানে ৫০০টি ছোট মিরর থাকবে। প্রতিটির অবস্থান ও কোণ অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ঠিক করতে হয়। এই কাজ ভারতীয় প্রযুক্তিতেই সম্ভব হয়েছে।’

এই প্রকল্পে ভারতের সদস্য প্রতিষ্ঠান তিনটি। সেই তালিকায় রয়েছে বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (IIA), পুণের IUCAA এবং নৈনিতালের ARIES সংস্থা। ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ভারতের অংশগ্রহণ অনুমোদন করে।

টেলিস্কোপটি তৈরি হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের মাউনা কেয়াতে। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪,০০০ মিটার উঁচুতে। পরিষ্কার আকাশ ও বায়ুমণ্ডলীয় বাধা কম থাকার কারণে এটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক গবেষণার অন্যতম সেরা স্থান হিসেবে বিবেচিত। ‘মাউনা কেয়াই আমাদের প্রাথমিক নির্মাণ স্থান,’ বলেন ড. সুনেতা।

আরও জানানো হয়েছে, টেলিস্কোপটি ব্ল্যাকহোল, দূরবর্তী গ্যালাক্সি, মহাবিশ্বের প্রারম্ভিক ইতিহাস সবকিছু নিয়েই গবেষণা করবে। তবে সবচেয়ে আকর্ষক লক্ষ্য হল ভিনগ্রহের জীবনের অনুসন্ধান।

ড. সুনেতার কথায়, ‘পৃথিবীর বাইরে অন্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না, সেটী খুঁজে বের করাই গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। টেলিস্কোপটি অন্য গ্যালাক্সির গ্রহে জীবনের প্রমাণ খুঁজবে।’

অর্থাৎ অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প বা জৈব যৌগের মতো রাসায়নিক উপাদানের সন্ধান করবে, যা জীবনের অস্তিত্বের সম্ভাবনা নির্দেশ করতে পারে।

জানা গিয়েছে, টেলিস্কোপ তৈরির কাজ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন দ্রুত এগোচ্ছে এবং অংশীদার দেশগুলোর যৌথ অবদানে কাজ ভালভাবেই এগোচ্ছে।

ড. সুনেতা বলেন, ‘ভারতের প্রযুক্তিগত অবদানের জন্য কাজের অগ্রগতি খুবই ভাল অবস্থায় রয়েছে।’ চোখ-ধাঁধানো প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনা নিয়ে এই টিএমটি হয়ে উঠতে চলেছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহাজাগতিক গবেষণা।