আজকাল ওয়েবডেস্ক: শরৎকাল এলেই কুমড়ো আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে। কেউ তা খোদাই করে প্রদর্শন করে, কেউ রান্না করে খায়, আবার কেউ উৎসবের অংশ করে তোলে। কিন্তু এই উজ্জ্বল কমলা ফলের ভেতরে লুকিয়ে আছে এক অজানা রহস্য, মাটি ও মানবস্বাস্থ্যের এক অদৃশ্য সংযোগ।
জাপানের কোবি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে কুমড়ো, ঝিঙা ও লাউয়ের মতো গাছগুলি চুপিচুপি মাটির দূষণকারী পদার্থ শোষণ করে নিজেদের ফলের মধ্যে জমা রাখে। এই অদ্ভুত আচরণই গবেষকদের কৌতূহলী করে তুলেছে।


কৃষি বিজ্ঞানী ইনুই হিদেয়ুকি বলেন, “মাটিতে থাকা এই দূষণকারীগুলি সহজে নষ্ট হয় না এবং মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে তা সমস্যা তৈরি করতে পারে। আশ্চর্যের বিষয়, অন্য কোনো ফসল এই কাজটি করে না—শুধু গার্ড জাতের উদ্ভিদগুলোই দূষণ শোষণ করে।” তিনি দেখেন, একই জমিতে অন্যান্য ফসল বেড়ে উঠলেও কেবল কুমড়ো পরিবারের গাছগুলোতেই বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়। কেন এমনটা হয়, তা জানতেই শুরু হয় নতুন অনুসন্ধান।


গবেষণায় দেখা যায়, এই গাছগুলির ভেতরে থাকা এক ধরনের বিশেষ প্রোটিন দূষণকারীর সঙ্গে শক্তভাবে যুক্ত হয় এবং শিকড় থেকে ফল পর্যন্ত সেগুলিকে টেনে নিয়ে যায়। প্রোটিন যত বেশি শক্তভাবে যুক্ত হয়, তত বেশি দূষণ ফলের ভেতরে পৌঁছায়। তবে সব গাছ সমান নয়। কিছু প্রজাতি অনেক বেশি দূষণ শোষণ করে, আবার কিছু তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এতে গবেষকদের সন্দেহ হয় — নিশ্চয়ই কোনো ভেতরের প্রক্রিয়া এই নিয়ন্ত্রণ করে।


ইনুইয়ের দল লক্ষ্য করেন, যেসব গাছের ফল বেশি দূষিত, তাদের স্যাপ বা গাছের তরল রসে প্রোটিনের পরিমাণও বেশি। অর্থাৎ প্রোটিনটি কেবল দূষণ ধরছে না, বরং স্যাপের মাধ্যমে ফলের দিকে পরিবাহিত হচ্ছে। বিপরীতে, তুলনামূলক ‘পরিষ্কার’ গাছগুলিতে একই প্রোটিন সেল বা কোষের ভেতরেই আটকে থাকে, বাইরে আসে না। এই সূক্ষ্ম পার্থক্যই নির্ধারণ করে—গাছটি দূষণ ছড়াবে, না ঠেকাবে।


আরও চমকপ্রদ হল, প্রোটিনের অ্যামিনো অ্যাসিডে সামান্য পরিবর্তনই ঠিক করে দেয় সেটি কোষে থাকবে নাকি স্যাপে ছড়িয়ে পড়বে। ইনুইয়ের দল যখন এই “স্যাপ-স্রাবিত” প্রোটিন তামাক গাছে প্রবেশ করায়, তখন সেই তামাক গাছও প্রোটিনটি স্যাপে পাঠাতে শুরু করে।


ইনুই বলেন, “যেসব প্রোটিন স্যাপে মিশতে পারে, কেবল তারাই দূষণ বহন করে ওপরের অংশে পৌঁছাতে পারে। এটাই কম ও বেশি দূষণ শোষণকারী প্রজাতির মধ্যে মূল পার্থক্য।” এই আবিষ্কার কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন মনে করছেন, যদি এই প্রোটিনের গঠন বা আচরণ জিনগতভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে এমন ফসল তৈরি সম্ভব যা মাটির দূষণ শোষণ করবে না।


ইনুই বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, প্রোটিনের গঠন বা স্যাপে নির্গমনের পথ পরিবর্তন করে এমন ফসল তৈরি করা সম্ভব যা দূষণমুক্ত থাকবে, এমনকি দূষিত মাটিতেও।” ফলে কৃষকরা দূষিত জমি ফেলে না রেখে, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর ফসল ফলাতে পারবেন। একই সঙ্গে এই গবেষণা থেকে জন্ম নিতে পারে ‘ফাইটোরিমিডিয়েশন’ নামের এক নতুন প্রযুক্তি—যেখানে গাছকেই ব্যবহার করা হবে প্রাকৃতিক ক্লিনার হিসেবে, যাতে তারা মাটির বিষ শোষণ করে তা নিরাপদভাবে জমা রাখতে পারে।
সবশেষে ইনুই বলেন, “আমার লক্ষ্য ছিল এমন গাছ খুঁজে বের করা, যা মাটির দূষণ শনাক্ত ও শোষণ করতে পারে। এখন আমরা জানি, সেই ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করেই একসঙ্গে খাবার নিরাপত্তা ও মাটির পরিশুদ্ধতা—দুটোই সম্ভব।”