আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বর্তমানে ভারত সফরে রয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই বিমানবন্দরে গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই সফরকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলে যেমন আগ্রহ বাড়ছে, তেমনি ইন্টারনেটে নানা ধরনের তত্ত্ব, জল্পনা এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বও ছড়িয়ে পড়ছে। তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল—পুতিনের হাঁটার ভঙ্গি। বহুদিন ধরেই অনেকে লক্ষ্য করেছেন, হাঁটার সময় রুশ প্রেসিডেন্ট তাঁর ডান হাত খুব কম নড়াচড়া করেন, কিন্তু বাম হাত সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে দোলায়। কেন এমনটা হয়?


এটি প্রথমবার নয় যে পুতিনের হাঁটার ধরন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আগেও বহুবার সামাজিক মাধ্যমে দাবি উঠেছিল যে পুতিন নাকি পারকিনসনস রোগে ভুগছেন—যে রোগে হাত বা শরীরের একাংশ অনিয়ন্ত্রিত বা অনড় হয়ে যেতে পারে। তবে এসব দাবি বহু চিকিৎসকই খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, পুতিনের মধ্যে এই ধরনের স্নায়ুরোগের অন্য কোনও উপসর্গ কখনোই দেখা যায়নি। তাহলে আসল কারণ কী?


এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে পুতিনের অতীত জীবনে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার বহু আগেই তিনি ছিলেন একজন গুপ্তচর। সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা ‘কেজিবি’—কমিটি ফর স্টেট সিকিউরিটি—১৯৫৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ছিল দেশের প্রধান নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৫ সালে পুতিন কেজিবিতে যোগ দেন। গোয়েন্দা জীবনে তিনি কঠোর অস্ত্র প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেলের পদে উন্নীত হয়েছিলেন।


গোয়েন্দা ও সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পুতিনের হাঁটার সময় ডান হাতের কম নড়াচড়া কোনও রোগের লক্ষণ নয়, বরং এটি তাঁর প্রশিক্ষণের ফল। কেজিবির প্রশিক্ষণে সদস্যদের শেখানো হত সবসময় সতর্ক থাকতে হবে, এবং যেকোনো মুহূর্তে অস্ত্র বের করে প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত থাকতে হবে। সেই কারণে তাদের একটি বিশেষ হাঁটার ভঙ্গি রপ্ত করানো হতো।


কেজিবির প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল অনুযায়ী, একজন অপারেটিভের প্রধান হাত—যেমন পুতিনের ক্ষেত্রে বাম হাত—স্বাভাবিকভাবে দুলতে পারে, যাতে হাঁটা স্বাভাবিক দেখায়। কিন্তু অন্য হাতটি শরীরের কাছে, প্রায় পকেটের আশেপাশে স্থির রাখা হতো। কারণ সেই হাতেই থাকত অস্ত্র, যা প্রয়োজন হলে এক সেকেন্ডের মধ্যেই বের করে ব্যবহার করা যায়। ডান হাতকে স্থির রাখার এই অভ্যাস এতটাই গভীরে প্রোথিত হয় যে সংস্থা ছাড়ার পরও অনেক সদস্য জীবনের শেষ পর্যন্ত এই কৌশল বজায় রাখেন।


সুতরাং পুতিনের হাঁটার ধরণ আসলে এক ধরনের "কমব্যাট-রেডি ওয়াক" যা যুদ্ধ বা গুপ্তচর অভিযানে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য তৈরি। এই আচরণগত অভিযোজন বা বিহেভিয়ারাল অ্যাডাপটেশন  বহু বছর ধরে তাঁর মধ্যে গেঁথে আছে।


অতএব, পুতিনের হাঁটার বিশেষ ভঙ্গির পেছনে কোনও অদ্ভুত রোগ বা ষড়যন্ত্রের গল্প নেই। বরং এটি তাঁর কেজিবি জীবনের পেশাগত প্রশিক্ষণের স্বাভাবিক পরিণতি, যা তাঁকে সবসময় সতর্ক, স্থির ও প্রস্তুত অবস্থানে থাকতে শিখিয়েছে।