আজকাল ওয়েবডেস্ক: নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে চলমান গণআন্দোলনের হিংসায়  প্রাণ হারালেন ভারতের গাজিয়াবাদের বাসিন্দা রাজেশ দেবী গোলা (৫৫)। পশুপতিনাথ মন্দিরে দীর্ঘদিনের সাধ পূরণের উদ্দেশ্যে স্বামী রামবীর সিং সাইনি-র সঙ্গে কাঠমান্ডু পৌঁছেছিলেন তিনি। কিন্তু আন্দোলনকারীদের আগুন ধরিয়ে দেওয়া একটি হোটেলই শেষ পর্যন্ত মৃত্যুকূপে পরিণত হয়।

৭ সেপ্টেম্বর গোলা দম্পতি কাঠমান্ডুর একটি বিলাসবহুল হোটেলে উঠেছিলেন। পরদিন পবিত্র পশুপতিনাথ মন্দিরে পূজা দেন তাঁরা। ৯ সেপ্টেম্বর বিদায় নেওয়ার কথা থাকলেও ততদিনে শহরে কারফিউ জারি হয় এবং বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়। তাই হোটেলেই থাকতে বাধ্য হন তাঁরা। ওই দিনই বিক্ষুব্ধ জনতা হোটেলটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

আগুন থেকে বাঁচতে রামবীর সিং স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ তলা থেকে নামার চেষ্টা করেন। চাদর বেঁধে নামার সময় রাজেশ দেবী হাত ফসকে নিচে পড়ে যান। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে তাঁর মৃত্যু হয়। রামবীর সিং অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। বৃহস্পতিবার তিনি স্ত্রী-র মরদেহ নিয়ে সোনৌলি সীমান্তে পৌঁছান। সাংবাদিকদের তিনি জানান, “আমরা প্রাণ বাঁচাতে লাফ দিই। আমার স্ত্রী গুরুতর আহত হন এবং পরে হাসপাতালে মারা যান।”

আরও পড়ুন: প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধূলিসাৎ পাকিস্তান! প্রাণহানি ৯৭, ক্ষতিগ্রস্ত ৪৪ লাখেরও বেশি মানুষ

নেপালে চলমান এই প্রতিবাদে এখনও পর্যন্ত ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন তিন পুলিশ সদস্য এবং রাজেশ দেবীসহ বহু সাধারণ মানুষ। আহত হয়েছেন প্রায় ১,৭০০ জন, যাদের মধ্যে ১,০০০ জন ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে জানিয়েছে নেপাল পুলিশ।

এই হিংসার জন্য দায়ী করা হচ্ছে দুর্নীতি বিরোধী গণআন্দোলনকে নেতৃত্ব দেওয়া নবীন প্রজন্মের (জেন জেড) আন্দোলনকারীদের। তবে আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন তরুণরা সামাজিক মাধ্যমে দাবি করেছেন, তাঁদের আন্দোলনের লক্ষ্য জবাবদিহি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম, ধ্বংসযজ্ঞ বা নিরীহ মানুষ হত্যা নয়। তাঁদের মতে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গোষ্ঠী আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে হিংসা ছড়াচ্ছে।

প্রচণ্ড উত্তেজনার মধ্যেই ৯ সেপ্টেম্বর নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন। কিন্তু তাতে অশান্তি প্রশমিত হয়নি। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবন, রাষ্ট্রপতির দপ্তর, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনসহ একাধিক সরকারি ও রাজনৈতিক দপ্তরে আগুন ধরিয়ে দেয়। বহু শীর্ষ নেতার বাড়িও আক্রান্ত হয়।

অগ্নিকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞে নেপালের হোটেল শিল্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় দুই ডজন হোটেল ভাঙচুর, লুটপাট বা অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। শুধু কাঠমান্ডুর হিলটন হোটেলের ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ৮০০ কোটি নেপালি টাকার বেশি। সমগ্র হোটেল খাতের ক্ষতির পরিমাণ ২,৫০০ কোটির ওপরে বলে জানিয়েছে হোটেল অ্যাসোসিয়েশন নেপাল। পর্যটন নেপালের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৭ শতাংশ জোগান দেয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম বড় উৎস।

একজন ভারতীয় তীর্থযাত্রীসহ এত মানুষের মৃত্যু ও অগ্নিকাণ্ড নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। শান্তিপূর্ণ সংস্কারের স্বপ্ন দেখলেও আন্দোলনের সহিংস রূপ এখন পুরো দেশকেই অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।